মহামারীতে বিনোদনের নতুন উপায় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বাড়ছে সাবস্ক্রিপশান


ওভার-দ্য-টপ বা ওটিটি হল একটি স্ট্রিমিং সেবা যা তার দর্শককে কেবল বা স্যাটেলাইট ছাড়াই টেলিভিশন দেখাতে পারে। এর জন্য শুধুমাত্র একটি ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন। দিন দিন ইন্টারনেট গ্রাহক এবং স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের বর্ধিত সংখ্যা মোবাইল বিনোদন বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাংলাদেশে, বিগত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ব্রডব্যান্ড এবং মোবাইল ফোন-ভিত্তিক ইন্টারনেট সংযোগের সংখ্যা ১৭.৫ মিলিয়ন বেড়েছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।সূত্র: A24 News Agency

অনলাইন সেবার উপর মানুষের ক্রমবর্ধমান নির্ভরতার কারন কোভিডের প্রাদুর্ভাব। বিশ্বজুড়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলি কয়েক বছর ধরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে, বিশ্বব্যাপী ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বাজারের আকার দাঁড়িয়েছে ১৭৮ বিলিয়ন ডালার, যা ২০২৭ সাল নাগাদ আনুমানিক ২৭৫ বিলিয়ন ডলার হবে। মিরাজুল আশেকিন খান নামে এক তরুণ জানান তারা এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মই বেশি পছন্দ করছেন, “এক সময় আমরা টিভি চ্যানেলে সিরিজ দেখতে খুব পছন্দ করতাম।

কিন্তু এখন আমরা তরুণ প্রজন্ম, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বেশি আসক্ত” ব্যাংক কর্মকর্তা জনাব আলমগীর কবির এর মতে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তন এনেছে তাদের জীবনে, “যদি আমরা একটি সিনেমা বা নাটক দেখতে চাইতাম তবে আমাদের হয় একটি সিনেমা থিয়েটারে যেতে হতো বা একটি টিভি সেটের সামনে বসতে হতো এবং এটির সময় সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কারণে, আমাদের জীবনে একটি পরিবর্তন এসেছে। এখন আমরা যখন খুশি বা যেখানে খুশি সিনেমা এবং নাটক দেখতে পারি। আমাদের সময়ের কাছে আটকে থাকার দরকার নেই। আমরা ঘুমের আগে, ঘুমের পরে বা কাজের মাঝেও দেখতে পারি। আমি বিশ্বাস করি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আমাদের বিনোদন জীবনে আমূল পরিবর্তন এনেছে।”

৭ম শ্রেণীর ছাত্র ইবতেশাম আহমেদ জানায়, “যখন কোভিড শুরু হয়েছিল, আমরা স্কুলে যেতে এবং বন্ধুদের সাথে দেখা করতে পারিনি। আমরা অ্যান্ড্রয়েড টিভি কিনেছি এবং আমাদের ৩ ভাই ও বোনের সবাই ইউটিউব, অ্যামাজন, ডিজনি এবং হটস্টারে অ্যানিমেল, কার্টুন দেখতে শুরু করেছে।

আরেক দর্শক জনাব শাহাদাত হোসেন জানান, “যুগের চাহিদা অনুযায়ী আমরা ফেসবুক, ইউটিউব, চরকি ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের বিনোদন পাচ্ছি। এগুলো আমাদের অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে যাওয়া সবসময় সম্ভব নয়। যেহেতু এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এগুলো আমাদের হাতে, আমরা সেগুলো এখানে দেখতে পারি।”

দর্শকদের এমন চাহিদার ফলস্বরূপ, বড় বড় প্রযুক্তি জায়ান্টরা একে একে বাজারে তাদের নিজস্ব স্ট্রিমিং সেবা নিয়ে আসছে।

গুড কোম্পানির সিইও সরদার সানিয়াত হোসেন বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ মহামারী ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোকে উৎসাহিত করেছে।

বায়োস্কোপ, জি৫, হইচই ইত্যাদির মতো বাংলাদেশের প্রায় সব নেতৃস্থানীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য অনুষ্ঠান তৈরি করা গুড কোম্পানির সিইও সরদার সানিয়াত হোসেন বলেন, “ওটিটি একটি নতুন বিস্ময় এবং এই মহামারী এটিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। আমরা ঘরে বন্দী ছিলাম এবং দূর থেকে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এতে আমাদের মধ্যে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে।

মহামারীর আগে, মোবাইল ডিভাইস বা কম্পিউটার স্ক্রিনের সাথে আমাদের এতটা সংযোগ ছিল না। করোনাভাইরাস মহামারী চলাকালীন, আমরা অফিসিয়াল জুম মিটিং, স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে বিনোদন এবং এমনকি আমাদের বাচ্চাদের ক্লাসও স্ক্রীনে শুরু করেছিলাম। এটি এই শিল্পকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছে।”

এদিকে, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম সিনেবাজ লিমিটেডের হেড অফ কন্টেন্টস মিঃ অনুপম রায়ের মতে এ শিল্পের ফলাফল পেতে ধৈর্য ধরতে হবে, “একটি বিনিয়োগের ফলাফল পেতে ২-৫ বছর সময় লাগে। আমরা আমাদের বিনিয়োগের খারাপ অবস্থায় আছি এবং আমরা বিশ্বাস করি আগামী পাঁচ বছর আমাদের এই অবস্থায় থাকতে হবে। কিন্তু সবকিছু ঠিক হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয় আসবে।”

ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন: Youtube Link: https://youtu.be/OSdLklNWhgI