মেসির কারণে দল ছাড়তে চান স্কালোনি!


ফাইল ছবি

দীর্ঘ ৩৬ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। এই সৌভাগ্যের প্রতীক বয়ে এনেছিল দুই লিও যুগলবন্দী লিওনেল স্কালোনি এবং লিওনেল মেসির হাত ধরে। ২০১৮ বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর স্কালোনির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল আর্জেন্টাইন ফুটবলের দায়িত্ব। ৪২ বছরের স্কালোনি দল সাজালেন সম্পূর্ণ নতুন এক ভঙ্গিতে। শুরুতে না থাকলেও পরে এসে তাতে যুক্ত হন লিওনেল মেসি।

স্কালোনি-মেসি জুটি এরপর আর্জেন্টিনাকে নিয়ে গিয়েছে অনন্য এক উচ্চতায়। ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অপরাজিত থাকার রেকর্ড করেছে আলবিসেলেস্তেরা। ২৮ বছরের শিরোপাখরা কাটিয়েছে কোপা আমেরিকা জয়ের মাধ্যমে। আর ২০২২ সালে তো বিশ্বকাপই ঘরে তুলেছে তারা। বিমান থেকে হাসিমুখে দুজন মিলে ট্রফি ধরে নেমেছিলেন আর্জেন্টিনার মাটিতে।

কিন্তু তাদের সেই সুসময় নাকি বেশ কিছুদিন আগেই পার করে এসেছিলেন। কিছুদিন আগেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে তাদের মাটিতে হারিয়ে মাঠে উল্লাসে মাতে আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। তবে সেই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হওয়ার আগেই আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী কোচ দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেন। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য অ্যাথলেটিক জানিয়েছে, সম্প্রতি স্কালোনির দল ছাড়তে চাওয়ার পেছনে নাকি মেসিরই দায় বেশি। দুজনের মাঝে নাকি অনেকটা দিন ধরেই মন কষাকষি চলছে। যা চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে ব্রাজিল ম্যাচ কেন্দ্র করে।

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে কিছুদিন আগে ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচ ঘিরে রণক্ষেত্র তৈরি হয়েছিলো রিও ডি জেনিরোর মারাকানা স্টেডিয়াম। দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বাধ্য হয়ে লাঠি চার্জও করে। সে সময় নিজ দেশের সমর্থকদের পাশে দাঁড়িয়ে মাঠ থেকে দল নিয়ে বেরিয়ে যান বিশ্বকাপজয়ী লিওনেল মেসি। আর এ নিয়েই মেসির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে স্কালোনির।

গোল ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্কালোনি এবং মেসির মধ্যে বিবাদের এটাই মূল কারণ। স্কালোনির অনুমতি না নিয়ে দল নিয়ে মাঠ ছাড়ায় মেসির প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আর্জেন্টিনার কোচ। আবার সেই ম্যাচের পর স্কালোনি যখন নিজের সিদ্ধান্তের কথা ড্রেসিংরুমে সবার মাঝে জানিয়ে দেন সেটি ভালোভাবে নেননি মেসি। দলের সঙ্গে আলোচনা না করে আকস্মিকভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় স্কালোনির প্রতি ক্ষোভ রয়েছে মেসিরও।

আবার সেই ম্যাচের পর স্কালোনি যখন নিজের সিদ্ধান্তের কথা ড্রেসিংরুমে জানিয়েছেন, তখন বিষয়টি ভালো লাগেনি মেসির। বুয়েন্স এইরেসভিত্তিক রেডিও ১০ স্কালোনির সংবাদ সম্মেলেনের পরদিন জানায়, দলের সঙ্গে আলোচনা না করে ভবিষ্যৎ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে কথা বলা পছন্দ করেননি মেসি। এই নিয়ে এলএমটেনের মাঝেও রয়েছে ক্ষোভ।

এদিকে যতই দিন যাচ্ছে, ততই চওড়া হচ্ছে স্কালোনির জাতীয় দল ছাড়ার গুঞ্জন। বলা হচ্ছে, স্কালোনি নাকি ক্লাবের দিকেই মনোযোগ দিতে চান। আর তাই এই পদক্ষেপ কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ইউরোপিয়ান ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। মুন্ডো আলবিসেলেস্তে জানিয়েছে, স্প্যানিশ ক্লাবটির পক্ষ থেকে নাকি আর্জেন্টাইন কোচের কাছে প্রাথমিক চুক্তির একটি নমুনাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্কালোনির জার্মান এজেন্সি সেটা এরইমাঝে গ্রহণ করেছে।

এই গণমাধ্যমের দাবি, রিয়ালে বর্তমান কোচ কার্লো অ্যানচেলত্তির অবস্থান এখনও নিশ্চিত না। তবে এর বিপরীত কথাও শোনা যাচ্ছে। অনেকেরই দাবি, বর্তমান কোচের কাছে তার পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছে স্পেনিশ ক্লাবটি। অ্যানচেলত্তি সত্যিই ২০২৪ সালে ব্রাজিলের কোচিং নিতে আগ্রহী কিনা তা নিশ্চিত হতে চান রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ।

সবমিলিয়ে দ্য অ্যাথলেটিক তাদের আঙুল তুলেছে মেসির দিকে। আর আর্জেন্টিনার গণমাধ্যমগুলো দোষ দিচ্ছে দেশটির ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি ক্লদিও তাপিয়াকে। আবার এর পেছনে রাজনৈতিক কারণও আছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই। যে তালিকায় আছে দ্য অ্যাথলেটিক নিজেও। শেষ পর্যন্ত কী হবে স্কালোনি আর আর্জেন্টিনার ভাগ্যে, তা জানতে অপেক্ষাটা নিশ্চিতভাবেই বাড়বে আর্জেন্টাইন ভক্তদের।