চীন প্রায়শই প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে থাকে যে, তার ভূখন্ড জবরদখল করা হয়েছে। ওটা ফেরত দেয়ার দাবি জানিয়ে বলতে থাকে, ‘ফিরিয়ে দাও, ফিরিয়ে দাও’। এসব ভঙ্গি দেখে মনে হতেই পারে, ন্যায্য দাবি-ই জানানো হচ্ছে। কিন্তু ব্যাপারটি সব সময় তা নয়।
চীন-ভারত মধ্যে ১৯৬২’র যুদ্ধ এবং লাদাখ সংঘর্ষ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এশিয়া টাইমস-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে কৌশলগত বিশেষজ্ঞ বার্টিল লিন্টনার এমনটাই বলছেন।
লিন্টনার বলেছেন, চীন শুধুমাত্র নিজের ভূখণ্ড ফিরে পাওয়ার জন্যই সীমান্ত বিরোধ জিইয়ে রাখছে, এমনটা ভাবা ঠিক নয়। বেইজিং অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতির বিশেষ উপাদানগুলোর একটি হচ্ছে, প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে ‘বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়ে’ ব্যাপক ভিত্তিক ‘ছাড়’ কব্জা করা। আর এ জন্যই ইচ্ছাকৃতভাবে সীমান্ত সম্পর্ক উত্তপ্ত করে রাখো। সমাধান করছি করছি বলে সমস্যাটা অনন্তকাল জিইয়ে রাখো।
বর্তমানে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ জিইয়ে রেখেছে চীন। বিশেষ করে অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে। যদি বলা হয় ওই প্রদেম কার? সারা দুনিয়া বলবে, ভারতের। শুধু চীনই দাবি করছে, ‘ওটা আমাদের’। এতে চীনের স্বার্থ হলো তাদের পর ভারত বাণিজ্যের জন্য সবচেয়ে বড় বাজার। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করাসহ আরও নানা কিছু রয়েছে।
চীনের ক্ষেত্রে বিরোধ তৈরির জন্য ছুতো তৈরি করাটাও মজাদার। নেপালের সঙ্গে চীনের বিরোধ তৈরি হয় হিমালয়ের শৃঙ্গ এভারেস্টের উচ্চতা নিয়ে। নেপাল বলে, এর উচ্চতা ৮৮৪৮ মিটার আর চীন বলে, ৮৮৪৪ মিটার। বিষয়টিকে ইস্যু করার মতলবে সীমান্তে নেপালের মাটিতে ১১টি দালান তুলেছে চীন। আর এতেই শুরু হলো সীমান্ত বিরোধ।
বেইজিং ও মস্কোর মধ্যে কমিউনিস্ট দুনিয়ার মাতব্বরি নিয়ে মানসিক সংঘাত চলছিল। আবার মস্কোর সঙ্গে পেশিশক্তি জাহির করার অজুহাত দরকার। তাই ১৯৬৯ সালে উসুরি নদীর কয়েকটি দ্বীপের মালিকানা দাবি করে বসে চীন। ফলত সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধও হয় চীনের।
লিন্টনার আরও বলেছেন, ইদানীং বিস্ময়কর একটি দাবি উচ্চারণ করছে চীন। বলছে, রাশিয়ার ভ্লাদিভোস্তক শহরটি একদা ছিল চীনের। তখন এ শহরের নাম ছিল ‘হাইশেনওয়াই।’ বিস্ময়কর এজন্যই যে, ইতিহাসে প্রথমবারেরর মতো চীন ওই শহরের মালিকানা দাবি করলো।