নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: করোনার ভারতীয় ধরনে যখন টালমাটাল রাজশাহী, তখন মানুষের পাশে দাঁড়াতে আত্মপ্রকাশ করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। নাম দেওয়া হয় ‘শহীদ জামিল ব্রিগেড’। সংগঠনটি তাদের সেবামূলক কর্মকান্ডের ১০১তম দিন অতিক্রম করেছে। এ উপলক্ষে বুধবার বেলা ১১টায় রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদের সামনে ‘ব্রিগেড সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমাবেশে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নিয়ন্ত্রিত এই ব্রিগেডের সদস্যরা অংশ নেন। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা। করোনাকালে তিনি এই সংগঠনের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
বলেন, ‘একদিন ফেসবুকে দেখলাম- ব্রিগেডের সদস্যরা একজন করোনা রোগীকে কোলে করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলছে। ফোন করে জানতে পারলাম, ওই রোগীর আত্মীয়-স্বজন পাশেই ছিলেন। কিন্তু করোনা রোগীর পাশে যাননি কেউ। তাই ব্রিগেডের সদস্যরা ওই রোগীকে কোলে করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলেছে। করোনা রোগীকেও ব্রিগেডের সদস্যরা তাঁদের নিজের আত্মীয়-স্বজন মনে করেছে।’
তিনি আরও বলেন, এই করোনাকালে আমিও শত শত মানুষকে মাস্ক পরিয়ে দিয়েছি। আমি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। আমার জন্য ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার এসেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো অ্যাম্বুলেন্সও পায় না। তাই জামিল ব্রিগেডের মাধ্যমে আমরা অ্যাম্বুলেন্স সেবাও দিয়েছি। আমরা সকল মানুষের কথা চিন্তা করে রাজনীতি করি। শুধু নিজেদের জন্য নয়।
বাদশা বলেন, শহীদ জামিল ব্রিগেড করোনা ঠেকাতে পারে, এই বিশ্বাস আমাদের আছে। এখন মুক্তিযুদ্ধের সফলতাকে গ্রাস করছে দুর্নীতি। এটি করোনার চেয়েও খারাপ। পুরো জাতিকে শেষ করে দিচ্ছে। রাজশাহীতে করোনা মোকাবিলায় জামিল ব্রিগেড যেমন সফল হয়েছে, তেমনি দুর্নীতির বিরুদ্ধেও ব্রিগেডের সদস্যদের কাজ করতে হবে। তবেই না আমাদের অগ্রগতি।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় জামায়াত-শিবিরের হাতে নিহত রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী ডা. জামিল আক্তার রতনের নামানুসারে গঠন করা হয় শহীদ জামিল ব্রিগেড। ছাত্রমৈত্রীর ওই নেতাকে স্মরণ করে রাকসুর সাবেক ভিপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ৩১ জন শিক্ষকের সামনে প্রকাশ্যে জামাত-শিবির ডা. জামিল আক্তার রতনকে হত্যা করেছিল।
সেই জামিলের কবরে প্রথম ফুল দিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শহীদ জামিলের মতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সৈনিকরা না থাকলে জামায়াত-বিএনপিকে উৎখাত করে এই সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হতো না। তাই মনে রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের সঙ্গে কোন আপস করা যাবে না। চক্রান্তকারীদের সঙ্গে কোন আপস নেই।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর ওয়ার্কার্স পটির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু। জামিল ব্রিগেডের প্রধান সমন্বয়ক দেবাশিষ প্রমানিক দেবুর পরিচালনায় বক্তব্য দেন- শহীদ রাসেল বিগ্রেড, ঢাকার প্রধান সমন্বয়ক সাদাকাত হোসেন বাবুল, নাট্যকার অধ্যাপক মলয় ভৌমিক, কবিকুঞ্জের সাধারণ সম্পাদক ও জামিল ফাউন্ডেশনের সভাপতি আরিফুল হক কুমার।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নারী মুক্তি সংসদের জেলার সভাপতি অধ্যাপিকা তসলিমা খাতুন, সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামার উল্লাহ সরকার কামাল, সাবেক ছাত্রনেতা সালাউদ্দীন জেমস, শহীদ জামিল ব্রিগেডের জেলা মনিটরিং কমিটির সমন্বয়ক আশরাফুল হক তোতা, মনিটরিং সেলের সদস্য আবু সাঈদ, আবদুল মতিন, নাজমুল করিম অপু, মনিরুদ্দীন পান্না, কামরুল হাসান সুমন, নগরীর মতিহার থানার সমন্বয়ক আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশে জানানো হয়, করোনা সচেতনতায় জামিল ব্রিগেডের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত দুই লাখ পিস মাস্ক ও আড়াই লাখ লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। করোনা রোগীদের ২৪ ঘণ্টা সেবা দিচ্ছে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স। ৫০টি সিলিন্ডারের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা।
এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৭০০ মানুষকে বিনামূল্যে করোনার টিকার জন্য অনলাইনে নাম নিবন্ধন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চারজন চিকিৎসকের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হচ্ছে। ব্রিগেডের সদস্যরা দাফন এবং সৎকারেও সহায়তা করে আসছেন। এসব কার্যক্রম চলবে।