নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরের গহেলাপুর এন.এম উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে গ্রামবাসী, কমিটির সদস্য ও বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মধ্যে অন্ত:দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা বোর্ড থেকে কমিটি অনুমোদন হওয়ার পর অভিযোগ তোলা হয়েছে যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর নকল করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার কারণে বর্তমানে বিদ্যালয়ের স্বাভাবাবিক পরিবেশ ভেঙ্গে পড়েছে। এতে করে যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪২সালে স্থাপিত হয় উপজেলার ঐতিহ্যবাহি গহেলাপুর এন.এম উচ্চ বিদ্যালয়। চলতি বছর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে বর্তমান কমিটির সভাপতি সদ্য প্রয়াত সাংসদ ইসরাফিল আলমের নির্দেশনা মোতাবেক ৯সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গত তৈরি করেন। উপজেলা পর্যায়ে সকল প্রক্রিয়া শেষে বোর্ডের অনুমোদনের জন্য সেই কমিটি গত জুন মাসের ৮তারিখে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে জমা দেওয়া হয়। এরপর কমিটি নিয়ে যদি কারো কোন অভিযোগ থাকে তা জানানোর জন্য নিয়ম অনুসারে শিক্ষা বোর্ড থেকে উপজেলা শিক্ষা অফিস ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাবর একটি চিঠি দেওয়া হয়।
চিঠি দেওয়ার ১০দিন পর্যন্ত এই নিয়মটি বলবদ থাকে। এর মধ্যে স্থানীয় সাংসদ অসুস্থ্য হয়ে লাইফ সাপোর্টে থাকার সুযোগে শিক্ষক স্বপন কমিটির তালিকা বোর্ডে জমা দেওয়ার প্রায় ১৫দিন পর গত জুলাই মাসের ২৪তারিখে একটি অ্যাডহক কমিটির তালিকা নিয়ে শিক্ষা বোর্ডে যান। তখন শিক্ষা বোর্ড অভিযোগ প্রদানের সময় শেষ হওয়ার কারণে পূর্বে জমা দেওয়া কমিটিকে আগস্ট মাসের ৫তারিখে অনুমোদন প্রদান করে। অনুমোদনের পর কমিটি তার কার্যক্রম শুরু করলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে মর্মে গতকাল রবিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ প্রদান করেছে। অপরদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে না জানিয়ে তৃতীয় পক্ষ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিদ্যালয়ের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পক্ষপাত মূলক ভ’মিকা পালন করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডা: নাজিম উদ্দিন বলেন সাংসদ ইসরাফিলের মৃত্যুর সুযোগ নিয়েছে দুর্নীতিবাজ শিক্ষক স্বপন। তিনি পায়তারা করছেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য। তাই তিনি একটি প্রভাবশালী মহলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ও আমাকে সমাজে হেয়পতিপন্ন করার লক্ষ্যেই এই মিথ্যে নাটক সাজিয়ে নিজের স্বার্থ হাছিলের চেষ্টা করছেন। সে আমার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে স্বপন এই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ের লাখ লাখ আত্মসাত করেছে। আমি যখন চলতি বছরের শুরুর দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৪মাস বিছানায় ছিলাম তখন স্বপন শিক্ষা সফরের নাম করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায় ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করে। এরপর করোনা ভাইরাসের কারণে তা বন্ধ হয়ে গেলে সে আজ পর্যন্ত কোন শিক্ষার্থীদের সেই টাকা ফেরত দেয়নি।
এরকম শত শত অভিযোগ রয়েছে স্বপনের বিরুদ্ধে। শিক্ষা বোর্ড থেকে ঘুরে এসে স্বপন আমাকে বলে তাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলে সে তার অভিযোগ তুলে নিবেন। কিন্তু এই বিদ্যালয়ের ছাত্র সদ্য প্রয়াত সাংসদ ইসরাফিল আলম বেঁচে থাকতে অন্য একজনকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অঙ্গিকার করেছিলেন। সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে স্বপন প্রভাবশালী মহলের মদদে এই স্বাক্ষর নকলের মিথ্যে নাটক সাজিয়েছে। তাই আমি যদি কোন অনিয়ম করে কমিটি গঠন করে থাকি তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা তদন্ত সাপেক্ষে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তা আমি মেনে নিবো।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান স্বপন বলেন আমি কমিটি গঠনের নিয়ম সম্পর্কে তেমন একটা জানি না। তবে করোনাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়ার সুযোগে আমাকে কোন কিছু না জানিয়ে এই কমিটিটা তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু আমার স্বাক্ষর নকল করে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাই আমি নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ প্রদান করেছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল জলিল বলেন কমিটি গঠনের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে নির্বাহী কর্মকর্তা। এছাড়া একটি কমিটি সম্পন্ন করে বোর্ডে পাঠানোর আগে উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন করাসহ নানা ধরনের প্রক্রিয়া শেষ করতে প্রায় ১মাস সময় লাগে। এরপর কাগজপত্রাদি অনুমোদনের জন্য শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয়। তখন শিক্ষক স্বপনের এমন অভিযোগ কোথায় ছিলো? আমার জানা মতে কমিটি গঠনে কোন অনিয়ম করা হয়নি। যদি কমিটি গঠনে কোন অনিয়ম হয়েই থাকে তাহলে তা তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন এই বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমি উভয় পক্ষকে ডেকেছি। তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক একটি পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার জোর চেষ্টা অব্যাহত রাখবো।