রাবিতে মানবাধিকার বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত


রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে  ‘মানবাধিকার: বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রবিবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে ডিনস কমপ্লেক্স কনফারেন্স কক্ষে রাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই সভায় মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে আলোচনা করেন আইন বিভাগের অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ।

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম। জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে সভাটি সঞ্চালনা করেন ।
আলোচনায় অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ বলেন, সার্বজনীন মানবাধিাকারের মূল বিষয় মানুষের মর্যাদা ও সমতা রক্ষা করা। ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৩য় অধ্যায়ে মৌলিক মানবাধিকারের স্বীকৃতি দেয়া আছে যা সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রেও উল্লেখ করা হয়েছিলো। পরে আমরা সেখান থেকে কিছুটা সরে আসলাম। যেমন সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে দেয়া হলো, যা সমতার সাথে সাংঘর্ষিক। নিজের সংস্কৃতি চর্চার অধিকার দেবার কথা সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিলো কিন্তু আমরা সেটিও রক্ষা করতে পারিনি।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সংবিধানে কাটা-ছেড়া করা হয়েছে। আমরা মানবাধিকার সঠিকভাবে রক্ষা করতে পারিনি। তবে শেখ হাসিনা সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে সমতা রক্ষা করার চেষ্টা করছে, দেশের দরিদ্র এবং মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকার অর্জন করেছে। কিন্তু আমরা এখনও নিজেদের মধ্যে মানবাধিকারের ধারণাকে বিকশিত করতে পারিনি।
বর্তমান বিশ্বেও মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। যুদ্ধ বন্ধ করার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্ব ব্যর্থ হচ্ছে। রোহিঙ্গারা নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে, নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। ইউক্রেনে আগ্রাসন চলছে। ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে, স্কুলে, হাসপাতালে বোমা ফেলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মানবাধিকারের সার্বজনীনতা হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, নোয়াম চমস্কি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে বলেছেন, ইট ইজ এ গ্রেট বøাফ। কিন্তু এরাই আজ মানবাধিকারের সবক দিচ্ছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জন্মের চারটি স্তম্ভতেও মানবাধিকারের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। মানবাধিকার ও গণতন্ত্র একে অপরের পরিপূরক। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া আদৌ প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সভ্যতার আদিলগ্ন থেকে মানুষের অধিকার ও উন্নয়নের কথা চিন্তা করা হয়েছে। পরবর্তীতে মানুষ তার বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। এটি মানবাধিকারের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য।
উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমরা আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আবহকে অবজ্ঞা করেছি। আমরা সব সময় আমাদের সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে পশ্চিমাদের সংস্কৃতি নিয়ে মাতামাতি করছি। যা সঠিক নয়। আমাদের ধর্মে মানবাধিকারের কথা বলা হলেও আমরা এখনো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের সময়ে বিরোধী গোষ্ঠীরা সক্রিয় ছিলো। স্বাধীনতা বিরোধীরা অনেক দেশের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। আজও সেই সাম্রাজ্যবাদের ধারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।

উপাচার্য সংবিধান সমুন্নত রেখে আগামী নির্বাচনে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, রক্তস্নাত বাংলাদেশের এই স্বাধীনতা। ৩০ লক্ষ মানুষকে যারা হত্যায় সহযোগিতা করেছে তারাই আজ মানবাধিকারের সবক দিচ্ছে। সেদিনের হত্যাকাণ্ডের সহযোগী তারা। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতাকে যখন হত্যা করা হয়েছে তখনতো এই মানবাধিকার সংস্থাগুলো, বিশ্বমোড়লরা কথা বলেনি। এখন তাদের সবককে গুরুত্ব দেয়ার তেমন দরকার নেই। ইরান, মিশর, ইউক্রেন, সার্বিয়া, মিয়ানমার, ইরাকে যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে সেখানে বিশ্ব মোড়লদের অবস্থান অত্যন্ত দুঃখের। স্বাধীনতাকামী নেতাদের যখন হত্যা করা হয়েছে তখন বিশ্বমোড়লদের ভূমিকা হতাশ করে।
আমাদের সংবিধানে যে মানবাধিকারের কথা বলা হয়েছে তা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব, এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমার অধিকার রক্ষার জন্য অন্যের অধিকার যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। অনেকে বলেন রাষ্ট্রকে এগুলো নিশ্চিত করতে হবে। আমার মতে, মানবাধিকার রক্ষায় সকল পক্ষের ভূমিকা রয়েছে। ইনডেমনিটি অ্যাক্ট করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার রহিত করা হয়েছিলো। যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম দৃষ্টান্ত। শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিতে শিক্ষকদের প্রতি তিনি আহবান জানান।