রাবি’র শারমিন হ্যান্ডপেইন্টিং ডিজাইনের কাজে সফল উদ্যোক্তা


স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শারমিন সুলতানা। তিনি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার বাসিন্দা। করোনাকালীন সময়ে বিশ্বে যখন স্থবিরতা বিরাজ করছিলো ঠিক সেই মুহূর্তে অবসর সময়টাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় ভাবছিলেন তিনি। তখন দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করার মনোবাসনা বাস্তবায়ন করার কথা মাথায় আসে তার। শুরু হলো তার সুপ্ত ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা।

প্রথম থেকেই পরিবারের সহযোগিতা পেলেও কটু কথা শুনতে হয়েছে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে। কিন্তু অদম্য আগ্রহের কাছে হেরে যায় সব প্রতিকূলতা। মুনাফার কথা চিন্তা না করে শুধু দেশীয় পণ্যকে কীভাবে আরো বেশি নান্দনিক ও সমৃদ্ধ করা যায় সেই চিন্তা তার মাথায়। পাঞ্জাবি, শাড়ি, জামা ইত্যাদি পোশাকের উপর হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি হ্যান্ড স্টিচ, তাঁতের নিজস্ব ডিজাইনের পোশাক তৈরি, খাদি পাঞ্জাবী ইত্যাদি নিয়েও কাজ করেন তিনি। পাটের ব্যাগ তৈরি ও তার ওপর পেইন্টের কাজও করেন এই শিক্ষার্থী।

শারমিন জানায়, দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করার চিন্তা ভাবনা অনেক ছোট থেকেই ছিলো তার। নবম-দশম শ্রেণীতে পড়াকালীন বাবার সাথে মেলা দেখতে যায় সে। সেখানে বাঁশের শিল্প, তালের পাখা, জামদানি শাড়ি, স্ট্রিচের কাথা সেলাইয়ের কাজ, মাটির পুতুল দেখে অভিভূত হন এ উদ্যোক্তা। তারপর থেকেই শিখতে থাকেন হ্যান্ডপেইন্টিং এর কাজ।

এই কর্ম প্রসারের জন্য ‘লীলাবতী’ নামে ফেসবুকে একটি পেজও আছে তার। সেখানে হ্যান্ডপেইন্টিং করা বিভিন্ন রকম প্রোডাক্টের ভিউ দেখানো হয়। ক্রেতারা অনলাইনে প্রোডাক্ট দেখে পছন্দ অনুযায়ী অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন। এমন অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে তার কাজকে করতে চান আরো গতিশীল। দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করতে বুটিক হাউজও তৈরি করতে চান তিনি। সেখানে কয়েকজন নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে আরো বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ক্ষুদে এই উদ্যোক্তা।

তিনি আরো বলেন, ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করার। আস্তে আস্তে স্বপ্নটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য ছোট ছোট পদক্ষেপ নিতে শুরু করি। দেশীয় পণ্যকে তুলে ধরা এবং প্রচারই আমার মূল উদ্দেশ্য। আমার তৈরি প্রোডাক্টগুলোর বিনিময় মূল্য থাকে খুবই সীমিত। যেন শিক্ষার্থীদের বাজেটের মধ্যে থাকে। বিভিন্ন ম্যাটারিয়াল ও কাজের মাত্রার ওপর দাম নির্ধারণ করে ৪৫০ থেকে ৮৫০ টাকার মধ্যে রাখার চেষ্টা করি।

ঢাকার সাভার থেকে অনলাইনে শারমিনের কাছ থেকে হ্যান্ডপেইন্টিং করা একটি পাঞ্জাবি অর্ডার করেন রেজওয়ান। পাঞ্জাবি হাতে পেয়ে অনলাইনের এমন সেবার সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, লীলাবতী পেজটি থেকে আমি প্রথমবারের মতো হ্যান্ডপেইন্টেড একটি খাদি পাঞ্জাবি অর্ডার করি। প্রথমত অনলাইনের কেনা-কাটায় আমি খুব একটা আস্থা রাখতে পারি না। কারণ এখানে প্রতারণার সম্ভবনা থেকেই যায়। কিন্তু লীলাবতী পেইজ থেকে অর্ডার করে আমি সম্পূর্ণরপে সন্তুষ্ট। পাঞ্জাবিটির সুন্দর বুনন ও মানসম্মত ছিল এবং সুলভ মূল্যেই পেয়েছি।

পড়াশোনার পাশাপাশি এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের মেয়েরা এখন সকল ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ভালো ভালো সেক্টরগুলোতে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও করছে। পড়াশোনার পাশাপাশি শারমিনের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।