রাবি প্রতিনিধি :রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মাদারবখশ হলের পুকুরপাড়ে চারুছায়ায় একদল তরুণ-তরুণীর হলদে শাড়ি ও পাঞ্জাবিতে চোখ আটকে যায় পথচারীদের। বাঁশের ডালা, কুলা, চালুন, মাটির ঘড়া ও মটকা দিয়ে সাজানো হয়েছে বর-কনের আসন। নিজ ক্যাম্পাসে এভাবেই বর-কনের সাজে বসে আছে আকিবুল ইসলাম ও সাদিয়া আফরোজ।
গতকাল শুক্রবারে এই গায়ে হলুদের আয়োজন করে বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনরা। চিরায়ত হলুদের মতোই হলুদ, মেহেদি, মিষ্টান্ন,ফলমূলসহ কোনো কিছুরই কমতি ছিল না সেখানে।
বর ও কনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী। বর আকিবুল ইসলাম আকিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে মাস্টার্সে পড়ছেন। তার বাসা শেরপুরে। পড়াশোনা পাশাপাশি তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত। আকিবুল হাসান পড়াশোনা পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্বও পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি সংগঠনটির আজীবন সদস্য হিসাবে আছেন।
এদিকে কনে সাদিয়া আফরোজ শৈলী বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগে মাস্টার্সে পড়ছেন। তার বাসা রাজশাহীর পদ্মা আবাসিক এলাকায়। দুই পরিবারের সম্মতিতেই তাদের বিয়ে হচ্ছে বলে জানান বর-কনে। বিয়েতে বড় ভাই, ক্যাম্পাসের বন্ধু-বান্ধব ও জুনিয়ররা উপস্থিত ছিলেন।
বাঙালি বিয়ের সবচেয়ে বর্ণাঢ্য পর্ব হলো গায়ে হলুদ। সাধারণত এই অনুষ্ঠান পারিবারিকভাবে হয়ে থাকে। নিজ ক্যাম্পাসে ব্যতিক্রমী এই আয়োজন সম্পর্কে বর আকিবুল ইসলাম আকিব বলেন, ‘ আমার খুব ইচ্ছে ছিল ক্যাম্পাসে এমন একটি আয়োজন হোক। বন্ধু-বান্ধব ও ছোটভাইরা মিলে আমার সেই আশা পূরণ করল। সকলের এতো ব্যস্ততা থাকার ফলেও এই আয়োজন উপলক্ষে এসেছে, আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। ক্যাম্পাসের সকলকে এক সাথে পেয়ে আমিই খুবই আনন্দিত। বাড়িতে হলে সকলকে একসাথে পাওয়া যেতো না। কাছের মানুষগুলোর সঙ্গে গায়ে হলুদ আয়োজন, এটা সত্যিই আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।’
অনুভুতির বিষয়ে কনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। ক্যাম্পাসে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হবে কখনও ভাবিনি। আমি অনেক বেশি আনন্দিত। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
এমন অনুষ্ঠানের আয়োজকদের মধ্যে বরের বন্ধু আবিদ হাসান একজন। তিনি বলেন, ‘বাড়ি থেকে অনেক দূরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে দাওয়াত পেলেও অনেক আত্নীয়ের বিয়েতে যাওয়া হয় না। বন্ধু আকিব যখন রাজশাহী বিয়ে করছে, আমরা সব বন্ধুরা মিলে আলোচনা করে আয়োজনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই করি। সত্যি বলতে এরকম আয়োজন করার কোন অভিজ্ঞতা অতীতে আমাদের ছিলো না৷ এই আয়োজন ব্যাতিক্রম এবং আনাড়ি হলেও বন্ধু, বড়ভাই ছোটভাই সকলের কাছে এর আনন্দ ছিলো সীমাহীন। স্মৃতিবিজড়িত এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান আমাদের মধ্যকার সৌহার্দ্যের ও ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি। নব-দম্পতিদের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা, শুভকামনা ও দোয়া রইলো।’
এই গায়ে হলুদ প্রোগ্রামের অন্যতম আয়োজক ছিলেন বরের আরেক বন্ধু ইসতেহার আলি।
তিনি বলেন, ‘বন্ধুবান্ধব মিলে ক্যাম্পাসে গায়ে হলুদ করার মধ্যে একটা অন্যরকম আনন্দ আছে। ভালবাসার জায়গায় বন্ধুর গায়ে হলুদ হচ্ছে বলে ভালো লাগছে। তার দাম্পত্য জীবনের জন্য শুভ কামনা রইলো।