রৌমারীতে ব্রীজ আছে সংযোগ রাস্তা নেই জনদূর্ভোগ চরমে


মাজহারুল ইসলাম, রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলায় ইজলামরী গ্রামের জিঞ্জিরাম নদীর উপর ও বড়াইবাড়ি গ্রামের ধরনী নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণ করা হলেও সংযোগ রাস্তা না থাকায় জনসাধারনকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে প্রায় শতাধীক অটোরিকসা, অটোভেন ও অটোবাইক চালক। মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। জীবনের ঝুকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থী। 

দূর্ঘটানার শিকার হয়ে পঙ্গত্ব জীবন যাপন করছেন অনেকেই। এ বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। সাবেক সংসদ সদস্য রুহুল আমিনের সময়ে এলাকার মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে জিঞ্জিরাম ও ধরনী নদীর উপর ব্রীজের বরাদ্দ দেন। আরডিআইআইপি-২ আওতায় ৪ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ইজলামারী ৮৫মিটার ব্রীজের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও দুই মাথায় সংযোগ রাস্তায় মাটি ভরাট না করায় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অপর দিকে বিলুপ্ত সিট মহল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায়  ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বড়াইবাড়ী ধরনী নদী উপর ৬৬মিটার ব্রীজ নির্মাণ কাজ শেষ হলেও একই অবস্থায় রয়েছে।

২২ আগস্ট (শনিবার) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এসব চিত্র। এলাকাবাসি অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার রৌমারী সদর ইইনিয়নের ইজলামারী, পুর্ব ইজলামারী, নামা বারবান্দা, বারবন্দা, কলাবাড়ি, বড়াইবাড়ি, চুলিয়ারচর, বাওয়ারগ্রাম, ঝাউবাড়িসহ অর্ধশতাধীক গ্রামের মানুষ এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করে থাকেন। এখানে ২টি বিজিবি ক্যাম্প, ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩টি হাফেজিয়া মাদ্রাসাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রৌমারী উপজেলা সদর হতে রাস্তাটি ইজলামারী  হয়ে ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ি গ্রামের রাস্তায় মিলিত হয়। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। ইতিপূর্বে জিঞ্জিরাম ও ধরনী নদীর উপর বাশেঁর সাকোঁ দিয়ে মানুষ পারাপার হতো।

অটোবাইক চালক জাইদুল জানান, ঠিকাদারের গাফলতির কারনে ব্রীজের দুই পাশে মাটি ফেলানো হয়নি। ফলে আমরা গাড়ি নিয়ে বিপাকে পড়েছি।ইজলামারী গ্রামের আবু সামা বলেন, কিছু দিন আগে ব্রীজের কাজ শেষ হয়েছে। তবে ব্রীজের দু মাথায় মাটি ভরাট না করায় যানবাহন তো দুরের কথা সাধারন মানুষও যাতায়াত করতে পারছে না।

প্রসঙ্গত, আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে কিছুটা হলেও পাকা রাস্তা ও বাঁশের সাঁকোর পরির্বতে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে ছোট বড় ৭টি ব্রীজ, চলমান আছে ৩টি ব্রীজের কাজ। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে উপজেলার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বন্দবেড় ইউনিয়নের সাথে চরশৌলমারী ইউনিয়নের যোগাযোগের ব্যবস্থা হলহলিয়া নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন একমাত্র ভরসা ছিল বাঁশের সাঁকো সেখানে গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ১০ কোটি ১৯ লক্ষ চৌদ্দ হাজার টাকা ব্যয়ে পাখিউড়া হলহলিয়া নদীর উপর নির্মিত কাজ হয়েছে ২১০মিটার ব্রীজ।

এছাড়া ঐ প্রকল্পের আওতায় ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ১কোটি ২৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ঝুনকিরচর সোনাভরী নদীর উপর ৫৫মিটার, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে  ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নতুন শৌলমারী জিঞ্জিরাম নদীর উপর ৫৪মিটার, ১ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কলমেরচর জিঞ্জিরাম নদী উপর ৫৪মিটার, ৮৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মাদারটিলা জিঞ্জিরাম নদী উপর ১৪মিটার ব্রীজ নির্মিত হয়েছে। ব্রীজের কাজ চলমান রয়েছে আরো ছোট বড় ৩টি ব্রীজ, জিআরডিপি প্রকল্পের আওতায় ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৬কোটি ২৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বাওয়ারগ্রাম জিঞ্জিরাম নদী উপর ১২৫মিটার, রংপুর দিনাজপুর অবকাটঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায়  ২কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে চরবোলমারী ৭৫মিটার, রংপুর দিনাজপুর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২কোটি চল্লিশ লক্ষ টাকা ব্যয় মদাব্যাপারীর ঘাট সোনাভরী নদীর উপর ৫১মিটার ব্রীজ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সাবেক সংসদ সদস্য রুহুল আমিন বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার রৌমারীর উন্নয়নের দিকে চিন্তা করে কয়েকটি ব্রীজ,কালভাট ও পাঁকা রাস্তার বরাদ্দ দিয়েছে এবং সবকটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ঠিকাদারের গাফলতির কারনে ইজলামারী ব্রীজের দুই পাশে মাটি ভরাট না করেই তারা চলে যায়। যার কারনে আমার এলাকার প্রায় ৫০টি গ্রামের মানুষকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমি নিজেই বিভিন্ন দপ্তরে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ঠিক একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বড়াইবাড়ি ধরনী নদীর উপর ব্রীজের।

রৌমারী উপজেলা প্রকৌশলী মেজবাহউল হক বলেন, উপজেলাটি নদ নদী দ্বারা বেষ্টটিত হওয়ায় উপজেলা সদরের সাথে ইউনিয়নগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো বিচ্ছিন্ন,অতিগুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে, কিছু এলাকায় ব্রীজের নির্মাণ কাজ চলমান আছে, ব্রীজের চাহিদা দেওয়া আছে পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূূর্ণ প্রতিটি এলাকায় ব্রীজ নির্মাণ করা হবে। বাঁশের সাঁকো থাকবে না।