ফয়সাল আজম অপু: চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন এনজিওদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কাছ থেকে চাপ প্রয়োগ করে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে জোরপূর্বক কিস্তি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে চলমান সংকটে কর্মহীন হয়ে পড়া সাধারণ গ্রাহকদের সংসার পরিজন নিয়ে জীবন যাপনে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের পক্ষে ঋনের কিস্তি প্রদান কষ্ট সাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এরই মাঝে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এজেডএম নুরুল হক ঋণগ্রস্তদের ঘোষনা দিয়েছিলেন করোনার পরিবেশ পরিস্থিতির কারনে জুন মাস পর্যন্ত এনজিও গুলো যেন সকল প্রকার কিস্তি আদায় থেকে বিরত থাকেন। এছাড়াও চাপ প্রয়োগ করে কিস্তি আদায় না করার জন্য আহ্বান জানান তিনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর সহ বাকি উপজেলা প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসকের বরাত দিয়ে এমন তথ্য জানানো হয়, এনজিও থেকে গৃহীত ক্ষুদ্র ঋনের কিস্তি পরিশোধে কোনও ঋণ গ্রহিতাকে ৩০জুন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধে বাধ্য করা যাবে না।
এমন ঘোষনার পর কর্মহীন হয়ে পড়া গ্রাহকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না এনজিও গুলো। গ্রাহকরা অভিযোগ করেন এনজিও কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিস্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন। এমন কি তারা জোর পূর্বক কিস্তি আদায় করছেন। সম্প্রতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের চৈতন্যপুর গ্রামের হতদরিদ্র ভ্যান চালক রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি প্রবৃত্তি এনজিওর ক্ষুদ্র ঋন কর্মসূচীর আওতায় ধাইনগর শাখা হতে ৪০ হাজার টাকা এককালীন ৬ হাজার টাকা লাভে ঋণ গ্রহন করেন। করোনা সংকটে সংসার চালাতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। হঠাৎ করেই সংস্থার লোকজন তার বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেয়। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সংস্থার লোকজন তার বাড়িতে অবস্থান করেন।
এসময় তিনি কিস্তি দিতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। তাতেও রেহাই হয়নি হতদরিদ্র রফিকুল ইসলামের। ফোনে বিভিন্ন ভাবে মামলা/হামলার ভয়ভীতি ও চাপ দিতে থাকে প্রবৃত্তি এনজিওর মালিক বাবু। বাধ্য হয়ে তাদের চাপে ধারদেনা করে ১৫ জুন মূল টাকা ৪০ হাজার ও ৬ হাজার টাকা সুদ সহ মোট ৪৬ হাজার টাকা নিয়ে অফিসে গিয়ে ঋণ পরিশোধ করে। কিন্তু তারপরও নিস্তার পায়নি হতদরিদ্র, ভ্যান চালক রফিকুল ইসলাম। রফিকুল ইসলাম আরও জানান, আমি সুদ সহ ৪৬ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও আবারও প্রবৃত্তি এনজিওর মালিক বাবু ১৭ জুন ফোন দিয়ে আমাকে দেখা করতে বলেন।
আমি অফিসে হাজির হলে মালিক বাবু সহ অন্য স্টাফরা আরও ২ হাজার টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। আমি প্রতিবাদ করি আমিতো সুদ সহ ৪৬ হাজার টাকা দিয়েছি। বাবু চিৎকার করতে, করতে মারতে উদ্যত হয় এবং বলে করোনা চলাকালীন গত ২ মাসের ২ হাজার টাকাও দিতে হবে। তিনি আরও বলেন ২ হাজার টাকা না দিলে পিঠের চামড়া তুলে ফেলবো। আমি পাওনা সমূদয় টাকা পরিশোধ করেছি তারপরও কেনো গালাগালি করছেন বললেই, আমাকে চড় থাপ্পড় মারতে থাকে এবং বলে টাকা না দিলে তোকে মেরেই ফেলবো। তোর কোন বাপ তোকে বাঁচাবে দেখবো। এ বিষয় উল্লেখ করে ভুক্তভোগী ভ্যান চালক রফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার (২৩ জুন) জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেন। একই ইউনিয়নের চৈতন্যপুর নামোটোলা গ্রামের নেসু মন্ডলের ছেলে হাবিবুর অভিযোগ করে বলেন, আমার কিস্তির টাকা দিতে দেরি হওয়ায় প্রবৃত্তি এনজিওর মাঠ কর্মী আমার স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে।
পরে উক্ত ধাইনগর ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার শুকুর আলি মিমাংসা করে দেন। চৈতন্যপুর গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী ঋণ গ্রহিতা মনারুল ইসলাম জানান, আমার স্ত্রী শরিফা বেগমকে কিস্তি দিতে না পারায় তারা লাঞ্চিত করে। গোপ্তমানিক গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে রিপন কিস্তি দিতে না পারলে, প্রবৃত্তি এনজিওর মালিক বাবুর নির্দেশে গরু খুলে নিয়ে যায় প্রবৃত্তি এনজিওর কর্মীরা বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রতিটি উপজেলার একাধিক গ্রাহক জানান, এই এলাকায় শুধু প্রবৃত্তি নয় মধুমতি, প্রয়াস, ব্র্যাক, আশা, দিগন্ত, ঠ্যাঙ্গামারাসহ বিভিন্ন এনজিও গ্রাহকদের কাছ থেকে জোর পূর্বক কিস্তি পরিশোধে চাপ প্রয়োগ করছে।
এ বিষয়ে প্রবৃত্তি এনজিওর মালিক বাবু বলেন, আমার বিরুদ্ধে অন্য এনজিওর কেউ ষড়যন্ত্র করছে। এসব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে বলেন আমি কোনো ঋণ গ্রহিতার উপর জুলুম করছিনা। জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানিনা বলেন। ধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাবারিয়া চৌধুরী বলেন, আমি প্রবৃত্তি এনজিওর এসকল কর্মকাণ্ডের কথা শুনেছি, তবে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে ইউএনওকে অবগত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিবো। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাকিব আল রাব্বী জানান, আমি বিষয়টি অবগত নয়, তবে কোন এনজিও জোর করে কিস্তি আদায় করতে পারবেনা। যদি কোন এনজিও করে এবং কেউ অভিযোগ করে তাহলে আমি জোরালো আইনি ব্যবস্থা নিব।
কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবেনা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এজেডএম নুরুল হক জানান, কোন এনজিও গ্রাহকদের কিস্তি পরিশোধে বাধ্য করতে পারবেনা। স্বেচ্ছায় কেউ চাইলে পরিশোধ করতে পারবে। যদি কোন এনজিও কিস্তি পরিশোধের জন্য গ্রাহকদের চাপ প্রয়োগ করে তাহলে ওই সকল এনজিও’ গুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।