শ্রীলঙ্কায় গণমাধ্যম নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন সংখ্যালঘু সাংবাদিকরা


শ্শ্রীলঙ্কায় তামিল জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বকারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে উদ্বেগজনক হারে অপরাধের রিপোর্ট করা হয়েছে। সাংবাদিকরা বলেছেন সংখ্যালঘু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এরকম অব্যাহত হুমকি, মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন। সিনিয়র সাংবাদিক হরেন্দ্রন কৃষ্ণসামি বলেছেন যে তামিল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানি ও সহিংসতা বেড়েই চলেছে। উল্লেখ্য যে সম্প্রতি তামিল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দুটি রিপোর্ট করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বকারী এ সাংবাদিকদের উত্তেজিত হওয়ার আরও একটি কারণ হল কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের ক্ষমা করেছে বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি। সূত্র: A24 News Agency

তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক অতীতে, আমরা দেখেছি যে তামিল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আক্রমণ এবং হুমকি খুব সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। গত মাসে, মুল্লাইটিভু এলাকায় দুটি ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছিল। একজন সাংবাদিকের উপর নৃশংস প্রকৃতির ঘটনা ঘটানো হয়েছিল, তবুও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাট্টিকালোয়া এলাকার আরেক সাংবাদিককে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দ্বারা তদন্ত করা হচ্ছে, যাতে তার প্রতিদিনের মিডিয়া কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। যদিও অতীতেও সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হয়েছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া হুমকি রোধে পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না।যদিও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হয়েছিল কিন্তু এখনও কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।“

কৃষ্ণসামি আরও বলেন, “দেশে বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা অত্যাবশ্যক। বাকস্বাধীনতা লঙ্ঘন করলে তা স্বৈরাচার ও নিপীড়নের দিকে চলে যাবে। এটি শুধুমাত্র শ্রীলঙ্কায় নয়, বিশ্বব্যাপী একটি শিক্ষা হয়ে রয়েছে। তাই বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিষয়, এটি মানুষের অধিকার। বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার হিসেবে সাংবিধানিকভাবে গৃহীত হয়েছে। আমরা এর পক্ষে কথা বলব এবং যারা এ ধরনের অধিকার লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধেও কথা বলব এবং তা রুখে দিতে অক্লান্ত চেষ্টা করব।“ আরেক সিনিয়র সাংবাদিক শানুকা করুণারথনে ব্যাখ্যা করেছেন যে ২০০৯ সালে শেষ হওয়া উত্তর পূর্ব যুদ্ধের রেশ এখনও রয়ে গেছে, কারণ তামিল সাংবাদিকরা এখনও ব্যাপকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক অতীতে, আমরা একটি ঘটনা রিপোর্ট করেছি যেখানে মুল্লাইটিভু এলাকায় দুই সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। পূর্ব প্রদেশের বাট্টিকালোয়াতে, একজন সাংবাদিককে শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। শুধুমাত্র সেই দুটি ঘটনাই রিপোর্ট করা হয়েছিল বলে আমরা উপসংহারে আসতে পারি। যদিও উত্তর-পূর্ব যুদ্ধ ২০০৯ সালে শেষ হয়েছিল, তবে এই অঞ্চলে তামিল সাংবাদিকরা এখনো হয়রানির শিকার হন। এমন আরও অনেক ঘটনা থাকতে পারে যা রিপোর্টই করা হয়নি। তাই আমাদের ধরে নিতে হবে যে এই ধরনের ঘটনা থামেনি। এর মানে হল যে তামিল সাংবাদিকরা এখনও হুমকির মুখে।

যদিও আমরা ধরে নিয়েছিলাম যে ২০০৯ সালের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে, তামিল সাংবাদিকরাও বাধা ছাড়াই কাজ করার স্বাধীনতা পাবে, কিন্তু তবুও তারা বিপদের মধ্যে রয়েছে। এই ধরনের ঘটনার সাক্ষী হওয়ার পর, এমনকি দক্ষিণের সাংবাদিকরাও সতর্কতা অবলম্বন করছেন এবং সামগ্রিকভাবে আমাদের উচিত মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার রক্ষা নিশ্চিত করা।

এছাড়া, উত্তরাঞ্চলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চলমান প্রতিবন্ধকতা এবং জীবনের হুমকিও বন্ধ হওয়া উচিত।“ তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অনেক ঘটনা রয়েছে যা রিপোর্ট করা যাবে না। করুণারথনে বলেন যে তামিল সম্প্রদায় আশা করেছিল যুদ্ধ শেষ হওয়ার সাথে সাথে তামিলদের সাথে আচরণের পরিবর্তন হবে কিন্তু তারা ভুল ছিল কারণ তা সত্ত্বেও মত প্রকাশের স্বাধীনতার না দেয়ার ঘটনাগুলি আরও বেশি করে ঘটছে এবং তা চাপা দেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য ২৮ জানুয়ারি বার্ষিক ‘ব্ল্যাক জানুয়ারি’ স্মরণে সাংবাদিক হত্যা ও গুমের তদন্তে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে আসছেন সাংবাদিকরা।

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুনঃ https://youtu.be/BRJkPWcrv6U