![](http://rajshahipratidin.com/wp-content/uploads/2023/12/IMG_20231208_233617-300x163.jpg)
শীতের রাত আর প্রকৃতি যেন ঢাকা পড়েছে কুয়াশার চাদরে। চারিদিকে বইছে হিমেল হাওয়া। অনেকেই তখন খাওয়া দাওয়া শেষ করে উষ্ণতার খোঁজে গরম কাপড় জড়িয়ে নিজেকে শীতের তীব্রতা নিবারণ করছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা কখনও ভাবিনা প্রচন্ড এই শীতের রাতে দুস্থ ও অসহায় মানুষগুলোর কি অবস্থা। কি হালে আছে তারা, কিভাবে কাটছে তাদের শীতের রাত। সমাজের এসকল ছিন্নমূল মানুষের কথা ভাববার সময় হয়তো আমাদের নাই। সবাই যেন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।
নিজ এবং নিজের পরিবারের আরাম আয়েশ আর উষ্ণতার পরশে কুয়াশার চাদরের মতো ঢাকা পড়ে গেছে আমাদের মানবিকতা ও সমাজের মানুষের প্রতি দায়িত্ব এবং কর্তব্যবোধ। কিন্তু সমাজে এমন অনেকেই থাকেন যারা নিজের আরাম আয়েশের চেয়ে সমাজ ও মানুষের প্রতি দায়িত্ব এবং কর্তব্যকে বড় করে দেখেন। সমাজের এমন দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের যখন উদাসীনতায় জেলা শহরের পথেঘাটে শীতে কাতর হয়ে পড়ে আছে ছিন্নমূল মানুষ। যেনো দেখার কেউ নেই। ঠিক তখন মহামানব হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার, পৌর এলাকার, আরামবাগ মহল্লার সদ্য এসএসসি পাশ একজন টগবগে তরুণ আল মামুন সনির আবির্ভাব। যিনি ছাত্র জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন।
তিনি গত বুধবার রাতের আধারে প্রচন্ড শীত আর নিজের আরাম-আয়েশকে উপেক্ষা করে রাস্তাঘাটে অবহেলা আর অযত্নে পড়ে থাকা মানুষের গায়ে তুলে দিয়েছে শীতবস্ত্র কম্বল। সেই সাথে দুয়াারে দুয়ারে গিয়ে দুস্থ ও অসহায় মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে মানবিকতায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ছিন্নমূল মানুষ তখন অনেকেই ঘুমিয়ে গেছেন, অনেকেই ভাঙ্গা ঘরের বারান্দায় বসে শীতে কাঁপছে আর রাতের প্রহর গুনছে। এদের কেউ কখনও ভাবেনি কোন দিনদরদী এত রাতে তাদের জন্য উষ্ণতার বার্তা নিয়ে আসবে। কেউ কখনও কল্পনাও করেনি সদ্য এসএসসি পাশ একজন তরুণ রাতের আরাম কে হারাম করে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসবে।
তাদের সব ভাবনা যেন পাল্টে গেল মুহূর্তের মধ্যে। তার নিজের কষ্টের জমানো টাকায় কেনা শীতের কাপড় নিয়ে যখন দুস্থ ও অসহায় মানুষের দুয়ারে দুয়ারে হাজির হলেন। তিনি রাতের আধারে কখনো মোটরসাইকেলে আবার কখনো পায়ে হেঁটে হতদরিদ্র এলাকার মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। মানুষের কাছে পৌছাইতে কোন কিছুই যেন তাকে বাঁধা দিতে পারেনি। নিজের ব্যবহৃত মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে ভাঙ্গা চুরা রাস্তা আর সরু অলিগলি কিংবা পচাঁনর্দমা পাড়ি দিয়ে মানুষের কাছে পৌছান।
ভ্যান গাড়িতে শুয়ে থাকা বৃদ্ধকে আবার বারান্দায় উঠে কখনও আবার মাথা নীচু করে কুঁড়ে ঘরে ঢুকে শীতার্ত মানুষের গায়ে জড়িয়ে দিয়েছেন কম্বল। মায়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকা নবজাতক ও বঞ্চিত হয়নি মানবিক তরুণ আল মামুন সনির উষ্ণতার পরশ থেকে। আধার রাতে এভাবে কাছে পেয়ে এই মানবিক তরুণকে জড়িয়ে ধরে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়তে দেখা যায় অনেক বয়োবৃদ্ধ নারীকে। অনেকেই তার মাথায় হাত রেখে মন খুলে তাকে আশির্বাদ করেন।
এসময় “স্বপ্নপূরণ হেল্পলাইন চাঁপাইনবাবগঞ্জ” এর প্রতিষ্ঠাতা মানবিক তরুণ আল মামুন সনি সমাজের বিত্তবানদের অসহায়, হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাড়াতে সকলের প্রতি আহবান জানান। এই মানবিক তরুণ তার প্রতিষ্ঠিত “স্বপ্নপূরণ হেল্পলাইন চাঁপাইনবাবগঞ্জ” এর উদ্যেগে এর আগেও অনেক মানবিক কাজ করেছেন। তবে এবার প্রচন্ড শীতকে উপেক্ষা করে আধার রাতে দুস্থ ও অসহায় মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে মানবিকতাকে তিনি নিয়ে গেলেন অনেক উচ্চতায়। তিনি ভবিষ্যতেও এধরণের মানবিক কাজে ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে বলেও প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে তার বন্ধু সৌমিক, সোহাগ, জাহিদ, শিশির, ফরহাদ, হাসিব ও কাজল উপস্থিত ছিলেন,।