বগুড়ায় আবাসিক হোটেলে স্ত্রী-সন্তানকে গলাকেটে হত্যা, সেনা সদস্য আটক


বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ায় আবাসিক হোটেলে স্ত্রী ও ১১ মাস বয়সী সন্তানের গলাকেটে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দী করে কক্ষে রাখে। পরদিন হোটেল ছেড়ে পালানোর সময় আজিজুল হক (২৪) নামে ওই সেনা সদস্যকে কৌশলে আটকে রেখে হোটেল কর্তৃপক্ষ। এরপর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাকে আটক করে।

রবিবার (২ জুন) বেলা ১১টার দিকে বগুড়া শহরের বনানী এলাকায় শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেল থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। নিহতরা হলেন- আশা মনি (২২) ও তার শিশুপুত্র আবদুল্লাহ হেল রাফি। আশা মনির স্বামী আজিজুল হক (২৫) সেনা সদস্য হিসেবে চট্টগ্রামে কর্মরত আছেন।

তার বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার হেউটনগর গ্রামের হামিদুল হকের ছেলে। তার স্ত্রী আশামনি বগুড়া শহরের নারুলী তালপট্টি এলাকার আসাদুল ইসলামের মেয়ে।

শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার রবিউল ইসলাম জানান, গতকাল শনিবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টার দিকে তমা ও মিরাজ পরিচয়ে হোটেলে ওঠেন। তাদের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ পরিচয় দিয়ে হোটেলের ৩০১ নম্বর কক্ষ ভাড়া করেন।

রবিবার (২ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আজিজুল হক রুমে ছেড়ে দিবে বলে ভাড়া পরিশোধ করতে চান। এ সময় হোটেলের ম্যানেজার তার স্ত্রী-সন্তান কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা সকালে চলে গেছেন। এ সময় ম্যানেজার রুম দেখে বুঝে নেয়ার কথা বললে আজিজুল হক স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করলে তাকে আটক করে থানায় খবর দেন হোটেল ম্যানেজার।

এদিকে আশামনির বাবা আসাদুল জানান, তিন বছর আগে আজিজুল হকের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হয়। মেয়ে সন্তান প্রসবের আগে থেকেই বাবার বাড়িতে বসবাস করে। জামাই দুই মাসের ছুটিতে বাড়ি আসে। রবিবার তার কর্মস্থলে চলে যাওয়ার কথা ছিল।

বৃহস্পতিবার জামাই আজিজুল নারুলীতে শ্বশুরবাড়ি আসেন। সেখানে দুই দিন থাকার পর শনিবার বিকেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শহরে মার্কেট করার জন্য বের হয়। রাত ১০টার দিকে আজিজুল হক ফোন করে তার শ্বশুরকে জানান, রাত ৮টার দিকে তিনি স্ত্রী-সন্তানকে নারুলী যাওয়ার জন্য রিকশায় তুলে দেন। কিছুক্ষণপর থেকে স্ত্রীর ফোন বন্ধ পাচ্ছেন।

পরদিন রবিবার(২ জুন) সকালে তিনি তার মেয়ের সন্ধান চেয়ে শহরে মাইকিং করার ব্যবস্থা করেন এবং সদর থানায় জিডি করতে গেলে বনানীতে হোটেলে মা এবং সন্তানের লাশ উদ্ধারের খবর পান।

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরাফত ইসলাম বলেন, রাতে যেকোনো সময় আজিজুল তার স্ত্রী-সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দী করে কক্ষের বাথরুমে রাখে এবং ছেলের মাথা বিচ্ছিন্ন করে সকালে করতোয়া নদীতে ফেলে দেয়।

পুলিশের একটি দল মাথা উদ্ধারের জন্য আজিজুলকে সঙ্গে নিয়ে নদীতে তল্লাশি শুরু করেছে। তবে হোটেল কক্ষ থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি রাম দা এবং চাকু উদ্ধার করা হয়েছে বলে তিনি আরও জানান।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আজিজুল হক পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুল হক বলেছেন, দাম্পত্য কলহের কারণে তিনি স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করেছেন। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে শাহজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো.শহীদুল ইসলাম বলেন, সেনা সদস্য আজিজুল হক হত্যাকা-ের কথা স্বীকার করেছেন। তার দাবি সে তার সন্তানের মাথা পাশের করতোয়া নদীকে ফেলে দিয়েছে। নিহত শিশুর মাথা খোঁজা হচ্ছে। এ ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়াধীন।