ওমিক্রনের কারণে আর্থিক মন্দার আশঙ্কা পর্যটনখাতে


১৬০০ টিরও বেশি প্রাকৃতিক পর্যটন আকর্ষণের দেশ এবং বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকতের দেশ, বাংলাদেশ করোনা ভাইরাস মহামারী দ্বারা কঠোরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, কারণ এর পর্যটন এখনও কারোনার প্রভাবে ভুগছে। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের সবশেষ(ডব্লিওটিটিসি) রিপোর্ট অনুসারে পর্যটন, দেশটির রাজস্ববাবদ জিডিপিতে ৪.৪ ভাগ অবদান রাখে এবং প্রায় ৩ মিলিয়ন আয় প্রদান করে এবং ২০২১ সালে এই খাতে ৩.১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল । খাতটিকে বাঁচানোর জন্য জাতীয় প্রচেষ্টা অভ্যন্তরীণ পর্যটনকে কিছুটা চাঙ্গা করেছিল কারন ১৫মিলিয়নেরও বেশি পর্যটক দেশটিতে ভ্রমণ শুরু করেছিল। সূত্র: A24 News Agency

পর্যটন ব্যবসায়ে সরাসরি জড়িত এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের ব্যবসায়ে ওমিক্রনের প্রভাব। খুলনায় সুন্দরবনের নিকটস্থ মংলা পশুর হোটেলের ম্যানেজার আজহারুল ইসলাম বলেন যে নতুন ওমিক্রন স্ট্রেনের আবির্ভাব পর্যটনের চাঙ্গাভাব থামিয়ে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, হোটেলের দখলের হার ৯০ শতাংশ থেকে মাত্র ১৫-২০ শতাংশে নেমে আসবে। তাঁর মতে, বাংলাদেশে ২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিড শুরু হওয়ার পর হোটেল সেক্টরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও তারা এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি বলে জানান তিনি।

গাড়ি চালক খলিল ফরাজী আরেকজন ভিকটিম, “ওমিক্রন আসার পর, এখন আমরা খুব খারাপ অবস্থায় আছি, কোনো পর্যটক আসছে না। গত ১৫-২০ দিন ধরে আমরা পর্যটকদের সাথে কোনো ভ্রমণ করিনি। আমরা খুব কঠিন পরিস্থিতিতে আছি।” এমন আরেকজন ট্যুরিস্ট বোট ব্যবসায়ী আবুল হোসেন, যিনি বাগেরহাটের গভীর বনাঞ্চলে পর্যটকদের ঘুরাতে নিয়ে যান। তিনি বলেন, “আমি ১৮ বছর ধরে এই ব্যবসায়ে আছি। আমাদের নৌকাচালকরা তাদের পরিবারের সাথে ভাল জীবনযাপন করছিল কারণ এখানে সবসময়ই প্রচুর পর্যটকের আনাগোনা ছিল কিন্তু করোনার পর কেউ কেউ নৌকা বিক্রি করে দিয়েছে।

আমাকেও একটা নৌকা বিক্রি করতে হয়েছে। আমার অন্য নৌকাটি শুকনো জমিতে পড়ে আছে এবং অর্থের অভাবে তা চালু করতে পারছি না।“ কোভিড-১৯ মহামারী এই খাতকে একটি ভারী ধাক্কা দিয়েছে কারণ জিডিপিতে এর অবদান এখন ৩২শতাংশ কমে গেছে। জিয়াউল হক হাওলাদার, যিনি পর্যটনের সুস্থতার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা, তিনি বলেন যে এ দেশের পর্যটন বন্ধ হয়ে গেলে, যে পরিবারগুলি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পর্যটনের উপর নির্ভর করে, তারা লকডাউনে আরও ক্ষতির সম্মুখীন হবে।তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ছয়টি ঋতু রয়েছে এবং প্রতিটি ঋতুর নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে।

প্রতিটি মানুষের জন্য এতে অনন্য আকর্ষণ আছে। মানুষ এখন ভ্রমণ-সচেতন। হঠাৎ করে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলে পর্যটনে বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বাংলাদেশের প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। তারা এবং তাদের পরিবার এর চূড়ান্ত ভুক্তভোগী হবে।”

ওমিক্রনের প্রভাব পড়েছে সুন্দরবনেও ফলে পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে। বাগেরহাটে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ইনচার্জ হাওলাদার আজাদ কবির জানান বাংলাদেশের পর্যটনে সুন্দরবনের গুরুত্বের কথা, সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশীদের জন্যই নয়, সারা বিশ্বের পর্যটকদের জন্যও একটি আকর্ষণীয় স্থান। করোনার আগে প্রচুর পর্যটক আসতেন, কিন্তু করোনা-আতঙ্ক শুরু হলে পর্যটকদের আসা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আবার যখন আমরা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পুনরায় চালু করি, তখন প্রচুর পর্যটক আসতে শুরু করে এবং এটি ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কিন্তু ওমিক্রন জানুয়ারিতে শুরু হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে এবং এখন পর্যটকদের সংখ্যা অনেক কম।”

এদিকে, ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) এর সভাপতি এবং স্ট্রেইট ওয়ে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, ঢাকা এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব রাফিউজ্জামান এ নিয়ে তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেন, “পর্যটন শিল্প হল একটি ব্যবসায়িক খাত যা যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদির দ্বারা প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুনরুদ্ধার হবে।

ওমিক্রনের কারণে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন, কারণ সরকার হয়তো আরেকটি লকডাউনের জন্য যেতে পারে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন যে খুব শীঘ্রই সব ঠিক হয়ে যাবে।