বাংলাদেশে অসহায় মায়েদের আশ্রয় গাজীপুরের ‘শিশু পল্লী প্লাস’ কেয়ার হোম


১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত গাজীপুরের, শিশু পল্লী প্লাস, কমপ্লেক্স একা ও অসহায় মায়েদের এবং তাদের শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করে। স্টুয়ার্ডেস থেকে মানবতা সেবিতে পরিণত হওয়া ব্রিটিশ নাগরিক প্যাট্রিসিয়া কার, এই কেয়ার হোমের প্রতিষ্ঠাতা। মিস প্যাট্রিসিয়া বলেন যে শিশু পলি প্লাস ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যাতে আর্থিক সমস্যা বা অন্যান্য অসুবিধার কারণে মহিলাদের তাদের সন্তান আরেকজনের কাছে দত্তক দেয়া থেকে বিরত রাখা হয়। সূত্র: A24 News Agency

কার আরও বলেন যে কেয়ার হোম পরিবারগুলিকে একসাথে রাখতে সহায়তা করছে। নিজ বক্তব্যে শিশু পল্লীর যাত্রা তুলে ধরেন মিস প্যাট্রিসিয়া, ‘আমি প্রথম বাংলাদেশে এসেছিলাম ১৯৮১ সালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একজন ক্রু সদস্য হিসেবে। সমস্ত ক্রুতাদের অফ-টাইমে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজে আগ্রহী ছিল। আমরা ঢাকার একটি হোটেলের কাছে শিশুদের জন্য কানাডিয়ান এতিমখানা পরিবারের সাথে কাজ শুরু করি। সেই শীতে, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ একটি অবৈতনিক ছুটির প্রস্তাব দিয়েছিল এবং আমি ভেবেছিলাম ৭-৮ বছর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন হোটেলে থাকার পরে, আলাদা সংস্কৃতিতে বাস করা ভাল হবে।

তাই ছুটি নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করলাম। আমরা ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের সাথে বাংলাদেশের জনগণের সাথে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হলাম এবং তারপরে বিদেশে সম্প্রসারিত হই। সেই সময়ে, এই জাতীয় প্রকল্পগুলি অস্বাভাবিক ছিল। সিএসআর বা কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি বলে এখনকার মতো কিছুই ছিল না। আমার মিডিয়ায় আগ্রহ ছিল এবং কিছু তথ্যচিত্র তৈরি করেছি। আমরা লক্ষ্য করেছি যে মায়েরা তাদের সন্তানদের এতিমখানায় দিচ্ছেন কিন্তু সন্তানদের দেখাশোনা না করায় তাদের মন খারাপ।

তারা তাদের সন্তানদের সাথে থাকতে চান কিন্তু পারেন না। তাই আমরা টাকা জোগাড় করে এই জায়গাটি তৈরি করি আর সন্তানদের তাদের মায়েদের কাছে রাখতে শুরু করি।‘কেয়ার হোমে শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত রাবেয়া সুলতানা বলেন, মা ও শিশুদের নিরাপদ ও স্নেহময় পরিবেশ দেওয়ার পাশাপাশি, শিশু পল্লী প্লাস কমপ্লেক্স মা ও শিশু উভয়কেই কীভাবে আত্মনির্ভরশীল এবং কীভাবে স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকতে হয় তা শেখায়।

যাতে শেখার পরে তাদের এলাকায় গিয়ে তারা তাদের দায়িত্ব নিতে পারে।তিনি বলেন, “আমরা মূলত তাদের জন্য যা ভাল হবে বলে মনে করি তার উপর ফোকাস করি। আমাদের পরিবারের সন্তানরা সাধারণত যা চায় তা পায়। হয়তো এই শিশুরাও যতদিন এখানে আছে ততদিন পাবে, কিন্তু এখান থেকে চলে যাওয়ার পর তারা কীভাবে বাঁচবে, আমরা তাদের শিখিয়ে দিই, কীভাবে আত্মনির্ভরশীল হতে হয়।“

এছাড়াও, কমপ্লেক্সটি মায়েদের কৃষি দক্ষতার উপরও প্রশিক্ষণ দেয়, কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষন দেন হাসিবুর রহমান, তিনি বলেন, “আমরা মূলত এখানে থাকা মায়েদের কৃষি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। যাতে এখান থেকে ফিরে যাওয়ার পর তাদের বাড়ির আশেপাশে কৃষি প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা তাদের আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলি।” শিশু পল্লীতে সব ধরনের কৃষিজ পণ্য, সবজি তারা নিজেরাই চাষ করেন।

এছাড়া, সেলাই দক্ষতা অর্জনের জন্য আছে এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ। টেইলরিং বিভাগের প্রশিক্ষক মোহাম্মদ ইসামুদ্দিন জানান, “এখানে আমরা প্রতি ছয় মাসে মানে বছরে দুবার মায়েদের প্রশিক্ষণ দিই। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, আমরা তাদের সেলাই সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় শেখাতে চাই যাতে বাড়ি ফিরে তারা স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে পারে।” তাঁতের কাজ শিখছেন এমন একজন মা বলেন, “আমি কুড়িগ্রাম থেকে এসেছি। আমি এখানে আমার ছেলের সাথে আছি। আমরা এখানে আসার আগে আমার ছেলে প্রথম গ্রেডে ছিলো, এখন সে ৫ম শ্রেণীর ছাত্র। আমি বুটিকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি যেন বাড়ি ফিরে আমি স্বনির্ভর হতে পারি।” এ কমপ্লেক্সে একটি স্কুল, একটি ক্লিনিক, রান্নাঘর, গভীর ও অগভীর নলকূপ এবং পুকুর রয়েছে।

বাড়ির একজন মা বলেছেন যে মায়েদের জন্য তিন বছর পর্যন্ত পুনর্বাসন কর্মসূচি রয়েছে, যারা কমপ্লেক্সের কাজ করে তাদের ভাতা পান। প্রকল্পটির সঙ্গে আছেন সিনিয়র সমাজকর্মী জয় বণিক, যিনি শিশু পল্লী প্লাসের জন্য সারাদেশ থেকে শিশু আছে এমন অসহায় মায়েদের বাছাই করে এখানে নিয়োগের জন্য কাজ করেন।

কিভাবে তাদের বাছাই করা হয় তা জানান তিনি, “আমরা প্রধানত তাদের টার্গেট করি যারা বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত বা যাদের স্বামীর অনেক দিন ধরে কোনো খোঁজ নেই এবং যাদের স্বামীরা অক্ষম এবং তাদের পরিবারকে সমর্থন করতে পারে না। সেইসাথে অবিবাহিত মা যারা অবাঞ্ছিত সন্তান প্রসব করেছে, তারা সকলেই তাদের সন্তানদের সাথে এসপিপি থেকে সেবা নিতে পারে।”