তানোরে বিএমডিএর সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে


তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ সেচ প্রকল্প কৃষিক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। কিন্ত্ত রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে বিএমডিএর সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে।

জানা গেছে, বিএমডিএর গভীর নলকুপ ও সেচ কমিটির অনুমোদিত মটরের কমান্ড এরিয়ায় স্থাপিত অবৈধ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পল্লী বিদ্যুতের এসব কর্মকর্তা-কর্মচারি ও দালাল চক্র। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দুর্নীতিবাজ একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী নীতিমালা লঙ্ঘন এবং নিয়মবর্হিভূতভাবে মৎস্য, মুরগী ও গরুর খামারের নামে অবৈধ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে।

এসব অবৈধ মটর থেকে সেচের জন্য ভুগর্ভস্ত পানি উত্তোলন করায় বিএমডিএর সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ সবকিছু জেনেও অবৈধ মটরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে জরিমানার নামে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

ফলে একশ্রেণীর মটর মালিক অধিক মুনাফার আশায় অবৈধভাবে গভীর নলকূপ স্কিমের জমিতে সেচ দিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এদিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন মটর স্কিমে সেচ পানির মূল্য নিয়ে প্রতিনিয়ত মটর মালিকের সঙ্গে কৃষকদের ছোট বড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তানোরে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ২৩ হাজার ৯৯৯ হেক্টর এবং সেচযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার ৩৩২ হেক্টর। বিএমডিএর গভীর নলকুপ রয়েছে ৫৩৬টি। বিগত ২০১৪ সালে মটর স্থাপন নিরুৎসাহিত করতে সেচ কমিটির অনুমোদন বাধ্যতামুলক করা হয়, যাতে সেচ কমিটির অনুমোদন ব্যতিত কেউ মটর স্থাপন করতে না পারেন। কিন্ত্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি এখানে পল্লী বিদ্যুৎ অতিউৎসাহী হয়ে অবৈধ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে।

সুত্র জানায়, সেচ নীতিমালা অনুযায়ী বিএমডিএর গভীর নলকূপের প্রায় (এক হাজার ৩শ’ মিটার) কমান্ড এরিয়ার মধ্যে কোনো অবস্থাতেই সেচ মটর স্থাপন করা যাবে না, আর বিদ্যুৎ সংযোগের তো প্রশ্নই আসে না। অথচ তানোরের বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে খাবার পানি, মুরগী-গরুর খামার ও মৎস্য চাষের নামে অবৈধ মটর স্থাপন ও বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে সেচ দিচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, তানোরের বাধাইড় ইউপির শসানতলা গ্রামে শাহজাহান আলী, বৈদ্যপুর গ্রামের রহিম বক্সের পুত্র আবুল হায়াৎ, পাঁচন্দর ইউপির শাহাপুর পশ্চিমপাড়ার বাক্কার আলী, গোলাম রাব্বানী লেলিন, চাঁদপুর গ্রামের সাদেক আলীসহ অসংখ্য মানুষ সেচ বাণিজ্যে করছে। আবার পল্লী বিদ্যুৎ যথারীতি এসব অবৈধ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে জরিমানার নামে বাণিজ্য করছে। অথচ সেচ নীতিমলা অনুয়ায়ী এসব মটর থেকে কৃষি জমিতে সেচ দেয়া হলে সেই মটরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা। এসব অবৈধ মটরের কারণে বিএমডিএ’র অধিকাংশ গভীর নলকুপ অকেজো হয়ে পড়ছে।

এব্যাপারে বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী মাহাফুজুর রহমান বলেন, গভীর নলকুপের কমান্ড এরিয়ায় সেচ মটর স্থাপনের কোনো সুযোগ নাই আর বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার তো প্রশ্নই আসে না এমনকি খাবার পানির মটর থেকে কৃষি জমিতে সেচ দেয়া যাবে না।

এব্যাপারে রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তানোর এরিয়া ম্যানেজার (ডিজিএম) বলেন, খাবার পানির মটর থেকে কৃষি জমিতে সেচ দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে।