পুঠিয়ায় হত্যা মামলা করে বিপাকে বাদির পরিবার


স্টাফ রিপোর্টারঃ রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় রকি হত্যা মামলার আসামিদের অব্যাহত হুমকিতে নিরুপায় হয়ে পড়েছেন বাদীর পরিবার। কোনো কোনো সময় মামলার বাদী, তার পরিবারের অন্য সদস্য ও আত্নীয়-স্বজনেরা রাতে বাড়িতে থাকতে পারলেও, আবার কখনও পুলিশ ও আসামিদের ভয়ে অন্যত্র পালিয়ে আত্নগোপনে থাকছেন। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরণের হয়রানির শিকার হয়ে তারা পারিবারিকভাবে আর্থিক ও মানসিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

পুঠিয়া থানার একজন এসআই নারীদের শারীরিকভাবে লাঞ্চিত ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। হত্যা মামলার আসামিরা দ্রুত মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আলটিমেটাম দিয়েছেন। অন্যথায় বাদীর পরিবারের বড় ধরণের ক্ষতিসাধন করবে বলেও হুসিয়ারি দিয়েছেন আসামিরা। বর্তমানে মামলার বাদী ও তার পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী মহানগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন নিহত রকির মামা মোঃ শফিকুল ইসলাম। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন নিহত রকির মা ও মামলার বাদী মোসাঃ রেহেনা বেগম, নিহত রকির মামাতো ভাই সোহানুর রহমান ও সজন আলী এবং খালা কাজলী বেগম। এ ঘটনায় আগেরদিন সোমবার সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন বাদীর ভাই মোঃ শফিকুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৮ সালের জুনে কিশোর রকিকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুঠিয়া থানায় মামলা করা হয়। ওই মামলার আসামিরা একই সালে জামিনে মুক্ত হন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে আসামিরা মামলার বাদী ও সাক্ষীদের মামলা তুলে নিতে অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এজাহারভুক্ত আসামি নিজাম গত ৪ নভেম্বর দুপুরে পুঠিয়া উপজেলার ফুলবাড়ি বাজারে রকি হত্যা মামলার ৬নং সাক্ষী শহিদুলের চা-মিষ্টির দোকানে যায়।

এসময় নিজাম হঠা’ত করেই শহিদুলকে হুমকি দিয়ে বলেন, দ্রুত মামলা তুলে নিবি এবং আদালতে আর কখনই সাক্ষী দিতে যাবি না। এতে নিজামের সাথে শহিদুলের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে নিজাম দোকান থেকে বাইরে বের হয়ে মোবাইল ফোনে তার লোকজনকে ডাকেন। আধা ঘণ্টার মধ্যে রকি হত্যা মামলার অন্যান্য আসামি মো. শহিদুল, মো. লোকমান, মো. নবী, মো. ছবি, মো. সাহেব আলী, মো. হাশেম আলী, মো. ইসলাম, মো. হবি, মো. শফি, মো. রেজাউল, সান মো. কালু, সনি, রকি ও আইয়ুব আলী ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।

এছাড়া তাদের সহযোগী মো. সুজন, লিখন, শাওন, হালিমসহ অনুমানিক ২০ জন যুবক দেশীয় বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্র হাতে নিয়ে প্রকাশ্যে ফুলবাড়ি বাজারে উপস্থিত হন।সেখানে নিজামের নেতৃত্বে আসামিরা ও তাদের অন্য সহযোগিরা হত্যার উদ্দেশে মিষ্টির দোকানের মালিক শহিদুল, তার ছেলে শাহীন ও হত্যা মামলার ১নং সাক্ষি শফিকুলের ছেলে মোঃ আমানুল্লাহ সাব্বিরের ওপর হত্যার উদ্দেশে অতর্কিত হামলা চালান এবং তাদের বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন।

মিষ্টির দোকান ভাংচুরসহ শহিদুলের পকেট থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা, ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ ৪ হাজার টাকা ও তার ব্যবহৃত চায়না মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সব মিলে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধন করেন হামলাকারীরা। ওই সময় শহিদুল, আমানুল্লাহ ও শাহীনকে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, হত্যা মামলার আসামিদের ও হামলাকারীদের মধ্যে অধিকাংশই এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারী, সুদ ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত। তাদের কারো কারো নামে একধিক মামলাও চলমান রয়েছে। এ ব্যপারে মামলার বাদীর ভাই শফিকুল ইসলাম ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার নিশ্চিতে অবিলম্বে আসামিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।