রাজশাহীতে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শহীদ জামিলকে স্মরণ


নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লড়াই-সংগ্রামের অন্যতম যোদ্ধা ছাত্রমৈত্রীর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ শাখার তৎকালীন সভাপতি শহীদ ডা. জামিল আক্তার রতনকে তার মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে। রবিবার (৩১ মে) ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ফুলে ফুলে ভরে গেছে শহীদ জামিলের সমাধি।

 

এদিন বেলা ১১টায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) প্রাঙ্গনে শহীদ জামিল আক্তার রতনের সমাধিতে প্রথমে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাজশাহী নগর ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দ। এ সময় শহীদ জামিলের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারা সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

 

এরপর শহীদ জামিলের সমাধিতে ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর কমিটি, শহীদ ডা. রতন ফাউন্ডেশন, শহীদ ডা. জামিল আক্তার রতন স্মৃতি সংসদ, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর নগর কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়।

 

সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৮৮ সালের এইদিনে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা শহীদ জামিলকে স্লোগান দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছিল। ঐ সময় রাষ্ট্র ধর্মের বিরোধিতা করে ছাত্রমৈত্রীসহ এদেশের বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন যখন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল- ঠিক সে সময় এই লড়াইকে নস্যাৎ করতে এবং বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিনত করার জন্য তৎকালীন সামরিক শাসক সৈরাচার এরশাদের নিয়ন্ত্রণে সাম্প্রদায়িক শক্তি শহীদ জামিল আক্তার রতনকে হত্যা করা হয়।

 

তারা বলেন, শহীদ জামিলের বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার যে লড়াই ছিল; তা এখনও অব্যাহত আছে। এখনও শহীদ জামিলের চেনতাকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, সমতাভিত্তিক ও জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে লড়াই তা আমরা এখনও চালিয়ে যাচ্ছি, ভবিষ্যতেও চালিয়ে যাবো।

 

রাজশাহী নগর ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ওহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু, সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, জেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আশরাফুল হক তোতা, নগর সম্পাদকম-লীর সদস্য সিরাজুর রহমান খান, মনিরুদ্দীন পান্না, নাজমুল করিম অপু, মনিরুজ্জামান মনির, মহানগর সদস্য ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি, শহীদ জামিল আক্তার রতন ফাউন্ডেশনের সভাপতি কবি আরিফুল হক কুমার, নিউ গভ: ডিগ্রি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি হালিম রায়হান।

 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সাবেক ছাত্রনেতা মাসুম আক্তার অনিক, নগর ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য সীতানাথ বণিক, সুজিত সরকার আব্দুর রাজ্জাক, সাঈদ চৌধুরী, সাহারুল ইসলাম টিয়া, সাবেক ছাত্রনেতা রুবেল আলী, নগর ছাত্রমৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় সরকার, বোয়ালিয়া থানার সভাপতি অমিত সরকার, নগর স্কুল বিষয়ক সম্পাদক ঋতু সরকার প্রমুখ।

 

প্রসঙ্গত, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লড়াই-সংগ্রামের অন্যতম যোদ্ধা ছিলেন ছাত্রমৈত্রীর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ শাখার তৎকালীন সভাপতি ডা. জামিল আক্তার রতন। তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় সামরিক শাসক এরশাদ। আর ক্যাম্পাসে তখন সক্রিয় সাম্প্রদায়িক অপশক্তি জামায়াত-শিবির।

 

১৯৮৮ সালের ১১ মে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী বিল উত্থাপন করা হলে দেশব্যাপী এর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বিরোধীতা শুরু করে। ৩১ মে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে ছিলো তুমুল উত্তেজনা। শহীদ জামিল সেদিন শিবিরের নৃশংসতার নির্মম শিকার হন।

 

জামিলকে পাওয়ামাত্রই শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা হুইসেল বাজিয়ে উপর্যুপরি কোপায়। ইট দিয়ে তার মাথা থেঁতলে দেয়া হয়। এতেও তারা থামেনি। তলোয়ার ঢুকিয়ে দিয়ে তার পেট এফোঁড়-ওফোঁড় করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।