আম উৎপাদনে শীর্ষে নওগাঁ জেলায় ৪ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা


রায়হান আলম, নওগাঁ থেকেঃ  চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে ছাড়িয়ে আম উৎপাদনে শীর্ষে এখন নওগাঁ। চলতি মৌসুমে নওগাঁয় ৪ লাখ ২০ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় সাড়ে ১২শত কোটি টাকার আম কেনা-বেচা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশে আম উৎপাদনে শীর্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিচিত হলেও বর্তমানে সারাদেশে আম উৎপাদনে শীর্ষে নওগাঁ রয়েছে। ফলে আমের ‘রাজত্ব’ শুরু করেছে এবং ‘আমের রাজধানী’ হিসেবে নওগাঁ পরিচিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চলতি বছরে নওগাঁয় ১১টি উপজেলায় ২৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। নওগাঁয় গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ৬ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। আগামীতেও বরেন্দ্র ভূমি হিসেবে পরিচিত পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলায় হাজার হাজার বিঘা জমিতে আম গড়ে ব্যাপক সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।

চলতি মৌসুমে নওগাঁর আম চাষিরা কনোরা ভাইরাসের কারণে বিপাকে পারেন। আম চাষিদের নায্যমূল্য কেনা-বেচা নিশ্চিত করতেই খাদ্যমন্ত্রী ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি আম পাকার আগে থেকেই জেলা, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, আম চাষি, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিকবার ভিডিও কনফারেন্স করেছেন।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, যে সব জায়গা থেকে আম ও লিচু যাবে রাস্তায় কোন ট্রাক যেন প্রতিবন্ধকতার মুখে না পড়ে, সে জন্য দৃষ্টি রাখবে সরকার। অ্যাপসের মাধ্যমে শুধুমাত্র আমের বাজারের সাথে নয়, পরিবহনের সাথেও যোগাযোগ থাকবে। সরকারী পরিবহনের সাথে, এমনকি বন্দরে ট্রাক কাভার্ড ভ্যানের সাথেও যুক্ত থাকবে। এছাড়াও ৮টি সংস্থার সাথে সংযুক্ত থাকবে। তাদের বললেই সেখানে চলে গিয়ে নিয়ে আসবে এসব পণ্য। আম নিয়ে ঢাকায় পৌঁছে দেয়ার পর খালি ট্রাক ফিরে গেলে যমুনা সেতুতে টোল ৫০ ভাগ নেয়া হবে। পাশাপাশি হাসপাতালে রোগীদের খাদ্যে কলার পরিবর্তে আম দেয়া, পুলিশ ব্যারাকে আমের বাজার গড়ে তোলা, সেনাবাহিনীতে আমের বাজার গড়ে তোলা ইত্যাদি ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যাতে আম চাষীরা আমের নায্য মূল্য পায়। সে জন্য নওগাঁর জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।

এ ছাড়াও ইতিমধ্যে নওগাঁর পোরশা উপজেলার সরাইগাছীতে খাদ্যমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আম কেনার হাট-বাজারের উদ্বোধন করেন। ফলে পোরশা উপজেলার শতশত আম চাষিদের আম কেনা-বেচার কষ্ট অনেকটাই লাঘব হয়েছে। পোরশা উপজেলার আম চাষিরা আগে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে সাপাহার উপজেলায় আসতেন। ফলে তাদের পরিবহণ খরচ বৃদ্ধি পেতো।

নওগাঁ কৃষি বিভাগের সূত্রে জেলায় আমপানসহ কয়েকটি ছোট ঝড়ে কাঁচা আমের ৫ ভাগ ক্ষতি হলেও সেটি আম পোক্ত হওয়ার সাথে সাথে ক্ষতি পুষিয়ে গেছে। তবে কৃষকরা বলছেন, ঝড়ে তাদের আমের প্রায় ২০ ভাগ ক্ষতি হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি আম মৌসুমে ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। আমপান ও ঝড়ের কারণে আমের ক্ষতি হওয়ায় ২ লাখ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ৩১ হাজার হেক্টরের একটু বেশি জমিতে আম চাষ করা হয়। গত বছর আম চাষে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ২ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদন হয়েছিল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, গত বছরের তুলনায় মাত্র ২ হাজার হেক্টরের মতো বেশি জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। দিনদিন কৃষি জমিতে বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, শিল্প কারখান গড়ে তোলায় কৃষি জমির পরিমাণ কমছে। এ কারণে আগামিতে জেলায় আম বাগন গড়ে উঠার তেমন লক্ষণ নেই। এ ছাড়াও অন্য কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন প্রতি বছর আমের ভালো ফলন হয় না। যার কারণেই কৃষকরা ধান, ভুট্টা, গমসহ অন্যান্যে ফসল চাষ করে থাকেন। তিনি আরো বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের গাছগুলো বেশি ভাগই বড়। সেই সব গাছ কেটে এবং নতুন আম বাগান গড়ে তুলতে আগ্রহী চাষিদের লেইট ভেরাইটিজ (দেরিতে পাকা) বারি-৪, গৌড়মতি ও যাদুভোগ জাতের আম লাগানোর জন্যে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কারণ এই সকল আম গুলো দেরিতে পাকে। ফলে কৃষকরা আমের বেশি দাম পেয়ে থাকেন।

লেইট ভ্যারাইটিজের মধ্যে ‘যাদুভোগ’ বিশেষ ধরণের অর্থাৎ টক-মিষ্টি বারোমাসি জাতের আম। জেলায় গত ৩/৪ বছর থেকে ইত্যে মধ্যে ‘যাদুভোগ’ ৭/৮শ’ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। নজরুল ইসলাম আরো বলেন, নওগাঁয় ৫ বছর আগে কিছু দিন চাকুরী করেছি। তখন সেখানে দেখেছি নওগাঁয় বরেন্দ্র ভূমিতে হাজার হাজার বিঘা বছরের বেশি ভাগ সময় পানির অভাবে পরে থাকে অর্থাৎ তেমন কোন আবাদ হয় না। যার কারণে নওগাঁয় আগামীতে আরো হাজার হাজার বিঘা জমিতে আম বাগান গড়ে উঠার সম্ভবনা রয়েছে।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সাহা জানান, ছোট জেলা নাটোরে গত বছরের তুলনায় তেমন উল্লেখ্যযোগ্য ভাবে আম বাগান গড়ে উঠেনি। চলতি বছর জেলায় ৫ হাজার ৫শ’ ২০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। ঝড়ে ক্ষতি হলেও এ থেকে ৭৭ হাজার ৩শ’ ৭ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলার মধ্যে লালপুর, বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর ও নাটোর সদর উপজেলাতেই বেশি আম চাষ করা হয়ে থাকে। আর সিংড়া উপজেলা চলন বিল হওয়ায় তেমন আমের বাগান গড়ে উঠেনি। আম চাষিদের বারোমাসি, বারি-৪ ও ১১ নতুন জাতের আম চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক জানান, রাজশাহীতে গত ২/৩ বছর থেকে তেমন আম বাগান গড়ে উঠছে না। গত বছরের তুলনায় মাত্র ১২৫ হেক্টর বেশি জমিতে আম বাগান গড়ে উঠেছে। অর্থাৎ চলতি বছরে ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে থেকে ২ লাখ ১০ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, রাজশাহীর আম বাগান গুলো অনেক পুরাতন অর্থাৎ বড়বড় গাছ। যে সকল কৃষকরা আম বাগান কেটে নতুন বাগান গড়ে তুলতে চাইছেন তাদের লেইট ভ্যারাইটিজ বারি-৪ ও গোড়মতি জাতের আম চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ইত্যে মধ্যে রাজশাহীতে ৫০ হেক্টর জমিতে গোড়মতি জামের আম বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। শামছুল হক জানান, গোড়মতি জামের আমের বিশেষত্ব হলো, আমের রাজা ল্যাংরার মিষ্টাতা এবং আশ্বিনা আমের সময় নিয়ে গোড়মতি আম উদ্ভাবন করা হয়েছে। ফলে আশ্বিনার আমের পরেও এই গোড়মতি আম পাকে। এ সময় দেশে অন্য কোন জাতের আম থাকে না। ফেলে গোড়মতি প্রতি মণ আম ৮/৯ হাজার টাকায় কেনা বেচা হয়ে থাকে।

নওগাঁ কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা বলছেন, ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষ করার চেয়ে আম চাষে বেশি লাভ হওয়া ও কম পরিশ্রম লাগায় বরেন্দ্র ভূমি হিসেবে পরিচিত পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলার কৃষকরা আম চাষে ঝুঁকে পরেছেন। ফলে প্রতি বছরই হাজার হাজার বিঘা জমিতে আম বাগান গড়ে উঠছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর নওগাঁয় ১৮ হাজার ৬৬৬ হেক্টর জমিতে গোপালভোগ, ল্যাংরা, খিরাশাপাতি, অরুপালি, নাগফজলি, বারি-৪, মল্লিকা, গুটিসহ বিভিন্ন জাতের আম চাষ করা হয়।

নওগাঁয় চলতি মৌসুমে পোরশায় ১০ হাজার হেক্টর, সাপাহারে ৮ হাজার ২৫০ হেক্টর, পত্নীতলায় ৩ হাজার ১৫ হেক্টর, নিয়ামতপুরে ১ হাজার হেক্টর, ধামইরহাটে ৬৭০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ৬২৫ হেক্টর, নওগাঁ সদরে ৪৪০ হেক্টর, মান্দায় ৪০০ হেক্টর, বদলগাছীতে ৩৩৫ হেক্টর, আত্রাইয়ে ৩৫ হেক্টর ও রাণীনগরে ৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে।

পোরশা উপজেলার আম চাষি রইচ উদ্দিন জানান, এক বিঘা জমিতে উন্নত জাতের আরুপালি আম (ছোট জাতের) গাছ ৬০টি লাগানো যায়। এরমধ্যে আবার বড় জাতের আম গাছ যেমন- গোপালভোগ, খিরাশাপাতি ১৬টি লাগানো হয়। কয়েক বছর আরুপালি নামানো পর সেগুলো কেটে বড় জাতের আমগাছ গুলো রাখা হয়। এতে তাদের বেশি লাভ হয়ে থাকে।

আরেক আম চাষি আমির উদ্দিন জানান, গাছ লাগানো পর প্রথম বছর আমের মুকুল ভেঙ্গে দেওয়া হয়। পরের বছর থেকে আম নেওয়া হয়। এক বিঘায় আম গাছ লাগাতে প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। দ্বিতীয় থেকে তেমন কোন খরচ হয় না অপরদিকে সামান্য লাভ দেখা দেয়। তৃতীয় বছর এক বিঘা জমি প্রায় ৭০/৮০ টাকার আম বিক্রি হয়ে থাকে।

পোরশা উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হাই জানান, পোরশা ও সাপাহারে পানির স্তর মাটির অনেক নীচে। ফলে সারা বছর অনেক জমিতে ফসল হয় না। যার কারণে কৃষকরা আম চাষে বেশি লাভ হওয়ায় আম চাষে ঝুঁকে পারেছেন জমির মালিকরা।

পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজ আলম জানান, গত ২৫ মে সরকারি ভাবে গোপালভোগ আম সংগ্রহ শুরু করার নির্ধারিত দিনক্ষণ থাকলেও আম পরিপক্ক না হওয়ায় তিনদিন পর আম সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এঁটেল মাটির কারণে এখানকার আম অন্য জেলার চেয়ে সুস্বাদু ও মিষ্টি। সেখানে কোন রকম রাসায়নিক দ্রব্য ও বিষ দেন না আম চাষিরা। ১০ বছর আগেও আগাম জাতের ল্যাংরা, গোপাল ভোগ, গুটি, খিরশাপতি চাষে ঝুঁকে পরেন আম চাষিরা। সারাদেশে এ সময় আম বাজারে সরবরাহ হওয়ায় বাজারে দাম ভালো পান না। ফলে লেইট জাতের আম আশ্বিনা, আরুপালি, বারি-৪, গৌড়মতি, ঝিঁনুক চাষে ঝুঁকে পরেছেন। এ জাতের আমের রোগবালাই অন্যান্যে আমের চেয়ে কম অন্যদিকে ফলনোও ভালো। আগাম জাতের বাজারে আম না থাকায় আশ্বিনা, বারি-৪, গৌড়মতি, আম আগষ্ট মাসের শেষ বাজারে বিক্রি শুরু হয়। এই লেইট জাতের প্রতি মণ বাজারে বিক্রি হয় ৪ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা দরে।

জুলাই-আগষ্ট মাস পর্যন্ত আশ্বিনা, আরুপালি, বারি-৪, গৌড়মতি আম পাওয়া যায়। বাজারে এই জাতের আমের চাহিদা থাকায় কৃষি বিভাগ থেকে এই লেইট জাতের আম চাষের জন্যে কৃষকদের পরামর্শ ও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

সরজমিনে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আমের বাম্পার ফলন হলেও করোনা ভাইরাসের কারণে অন্য বছরের মতো নওগাঁয় আম চাষিরা আম বাগান আগেই বিক্রি করতে পারেননি। অন্যদিকে আমপানসহ ছোট ৪/৫টি ঝড়ে আমের ক্ষতি হওয়ায় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তাই ছিলেন।

নওগাঁয় তবে ঈদের পর থেকে আম কেনা-বেচা শুরু হওয়ার সাথে সাথে থেকে ল্যাংরা ২ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা ও গোপাল ভোগ ১৮০০ টাকা থেকে ২২শ’ টাকায় কেনা বেচা শুরু হয়। গত বছরের তুলনায় আমের ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা খুশি হয়েছেন।

নওগাঁর আরেকটি বিশেষ সুস্বাদু আম নাগফজলি। এই আমগুলো বিশেষ পত্নীতলা, বদলগাছী, ধামইরহাট ও মহাদেবপুরে করে চাষ হয়ে থাকে।
এদিকে আম চাষিরা আম যাতে যথাযথ ভাবে আম বিক্রি ও ব্যবসায়ীরা আম কিনতে নিশ্চিন্তে পারেন সেই লক্ষে ১৯ মে সাপাহারে পুলিশের উদ্যোগে আম ব্যবসায়ী ও চাষিদের সাথে পুলিশের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। শেষে পুলিশী হয়রানি বন্ধে শতভাগ আশ্বাস দেন পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান বিপিএম।

জেলায় এই প্রথম আম ব্যবসায়ী ও চাষিদের সাথে পুলিশের মত বিনিময়কে সাধুবাদ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আম ব্যবসায়ী ও চাষিরা বলছেন, পুলিশের সহযোগিতায় বিভিন্ন জেলা থেকে আম ব্যবসায়ী এসেছেন। ফলে নওগাঁর আম ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে। ইত্যে মধ্যে পুলিশের উদ্যোগে সাপাহারে পুলিশী কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা করা হয়েছে। যাতে আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের কোন হয়রানি না হয়।

সাপাহারের আম চাষি তছলিম উদ্দিন, ফারুক হোসেনসহ অন্য আম চাষিরা জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর আমও ভালো হয়েছে। বিগত বছর গুলোতে নওগাঁ থেকে বিদেশেও আম রপ্তানি করা সম্ভব হয়েছে। এ বছর তা করোনা ভাইরাসের কারণে সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, জেলার সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলার আমের কেনাবেচা মূল্য কেন্দ্র সাপাহার। সাপাহারে প্রতি বছর দেড়শ’ থেকে ২শ’ আড়ৎঘরের মাধ্যেমে শতশত আম ব্যবসায়ী দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে আম কিনে নিয়ে যান। প্রতি বছর মে মাসের মাঝামাঝি থেকে আম কেনা বেচা শুরু হলেও চলতি আম মৌসুমে আম না পাকায় নওগাঁয় দেরিতে শুরু হয় কেনাবেচা।

সাপাহার আমের আড়ৎদার ওমর ফারুক, জহির উদ্দিন জানান, ইত্যে মধ্যে আড়ত ব্যবসায়ীরা তাদের আড়তের মাধ্যমে পুরোদমে আম কেনা বেচা শুরু হয়েছে। সাপাহার আম আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক নেতা ও সদস্য জাহাঙ্গীর আলম জানান, ইত্যে মধ্যে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার আম ব্যবসায়ীরা যাতে নায্য মূল্য পান এবং রাস্তায় কোন হয়রানি না করা হয় সে জন্যে বিভিন্ন দিক নির্দেশণা দেওয়ায় তারা হয়রানি হচ্ছে না। ফলে আমের ব্যবসা সুষ্ঠু ভাবে করতে পারছেন।

পোরশা আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সামাদ শাহ চৌধুরী জানান, পোরশায় আমপানসহ কয়েকটি ঝড়ে আমের কিছুটা ক্ষতি হলেও অন্য জেলাতে আম না থাকায় নওগাঁর আম ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে। পোরশার সারাইগাছীতে আম কেনা-বেচার হাট স্থাপন করায় উপজেলার শতশত লোক সহজেই আম কেনা-বেচা করতে পারছেন। আগে সকল আম চাষিদের সাপাহারে যেতে হতো।

পোরশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হামিদ রেজা জানান, আম ব্যবসার জন্যে অনলাইন, পরিবহণ, ট্রেনসহ সরকারি ভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জানান, এ উপজেলায় ৮ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। এসব বাগান থেকে প্রায় ৯৯ হাজার মেট্রিক টন আম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে বাজার অনুযায়ী ৬শ’ কোটি টাকার মতো আম বেচাকেনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সাপাহার আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা জানান, প্রতি বছর শুধু সাপাহারে ৭০০ কোটি টাকা থেকে সাড়ে ৭০০ কোটি টাকার আম কেনা বেচা হয়। তবে এ বছর পোরশায় আমের নতুন হাট-বাজার করা সাপাহারে সরবরাহের কোন ঘাটতি নেই।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক এএফএম গোলাম ফারুক হোসেন জানান, ঠাঁঠাঁ বরেন্দ্র ভূমি হিসেবে পরিচিত নওগাঁয় অন্যান্য ফসলের চেয়ে আম চাষে বেশি লাভ হওয়ায় আম চাষ ঝুঁকে পরেছেন। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলার শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই আম চাষ করে থাকেন। চলতি বছর ২৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। যা থেকে নওগাঁয় ৪ লাখ ২০ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

বর্তমানে কৃষকদের আরুপলী, বারী-৪, বারী-১১, ঝিনুক, গৌড়মতি, ব্যানানা ম্যাংগসহ নতুন অর্থাৎ উন্নত জাতের আম চাষের পরামর্শ এবং চারা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ফলে কৃষকরা আম চাষে বেশি লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে কৃষকদের মধ্যে আম চাষে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। জেলায় আমের মধ্যে আগাম পাকা জাতের ল্যাংরা, গোপাল ভোগ, গুটি, খিরশাপতি জাতের ৭০ ভাগ আম চাষ করা হয়ে থাকে। এই আগাম জাতের আম বাজারে ১ হাজার টাকা থেকে সবোর্চ্চ আড়াই ২ হাজার টাকা দরে প্রতি মণ বিক্রি হয়ে থাকে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ জানান, ঠাঁঠাঁ বরেন্দ্র ভূমি হিসেবে পরিচিত নওগাঁয় অন্যান্য ফসলের চেয়ে আম চাষে বেশি লাভ হওয়ায় আম চাষ ঝুঁকে পরেছেন। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলার কৃষকরা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই আম চাষ করে থাকেন। চলতি বছর ২৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, দেশের মধ্যে সবচেয়ে চাাঁপাইনবাগঞ্জ জেলা আম উৎপাদনে শীর্ষে ছিল। তবে এ বছর আম উৎপাদনে নওগাঁ শীর্ষে রয়েছে। প্রতিদিন যে ভাবে শতশত বিঘা আম বাগান গড়ে উঠতে তাতে নওগাঁ আমের রাজধানী হিসেবে খ্যাত হবে।

নওগাঁ চেম্বার অফ কমার্স ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি ইকবাল হোসেন শাহারিয়া জানান, চলতি আম মৌসুমে গত বছরের তুলনায় আম বেশি চাষ হওয়ায় নওগাঁয় প্রায় সাড়ে ১২ শত কোটি টাকার আম কেনা-বেচার সম্ভাবনা রয়েছে। নওগাঁয় যে ভাবে প্রতিদিন আম বাগান গড়ে উঠছে তাতে সারাদেশে আমের ‘রাজত্ব’ করবে ‘নওগাঁ জেলা’।