ঋষি-নীতুর লাভস্টোরি সিনেমার থেকে কিছু কম নয়


রাপ্র ডেস্ক: সাদা শার্ট, হাতে গিটার, গলায় সাদা লাল মাফলার। বাহু বিস্তার করে ঋষি বললেন, হাম, তুম সনম…সাতো জনম …মিলতে রহে …কুছ অ্যায়সে। প্রেমের মন্ত্র উচ্চারণ করলেন ঋষি। এই গানের শব্দের মতোই সাত জন্মের বাঁধনে বাঁধা পড়লেন ঋষি-নীতু। যাওয়ার কালে মনে করিয়ে দিয়ে গেলেন সেই ফেয়ারিটেল লাভস্টোরি।

ফিল্মি পরিবারের রোমান্সও বেশ ফিল্মি। কোনও ছবির চিত্রনাট্য-এর চেয়ে কম কিছু নয়। ঋষি-নীতুর লাভ স্টোরি নিয়ে ছবি করা যায় অনায়াসেই। ববির শুটিংয়ের সময় অল্প বয়সী ঋষি- ডিম্পলের মধ্যে খানিক প্রেম হয়। চোখে চোখের সেই প্রেম, ভাষা পাওয়ার আগেই, বিয়ে ঠিক হয়ে যায় ডিম্পলের। সুপারস্টার রাজেশ খান্নার সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় তার।
ঋষির মনে তখন বেশ ব্যথা। পেহেলে প্যায়ার কা পেহেলা গম। মনে চোট লাগবে, সেটাই স্বাভাবিক। যশ, খ্যাতি, মহিলাদের উড়োচিঠি, সবই রয়েছে। কিন্তু জীবনে সঙ্গীর অভাব। এমনই মনের অবস্থা নিয়ে জহেরিলা ইনসান এর শুটিং শুরু করলেন ঋষি। সেই প্রথম নিতু সিংয়ের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন তিনি। ছবির সেটে প্রথম প্রথম তাদের আলাপ। লাভ অ্যাট ফাস্ট সাইট ছিল, ঠিক তা নয়। তবে ঋষি অনুভব করেছিলেন, মনের ব্যথাটা আর হচ্ছে না। কিন্তু কখনোই কিছু খুলে বলেননি তিনি। বরং উল্টোটাই। নীতুর পেছনে লাগার সুযোগ খুঁজে বেড়াতেন তিনি। কথায়-কথায় নীতুকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতেন। প্রথমদিকে নীতুর একেবারেই পছন্দ ছিল না তাকে। রীতিমতো ঋষিকে ভয় পেতেন তিনি।
তারপর কাভি কাভি, অমর আকবর অ্যান্থনি, দুসরা আদমি, খেল খেল মে-র মতো বেশ কিছু ছবিতে জুটি বেঁধে দর্শককে মুগ্ধ করেছেন তারা। ততদিনে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে দুজনের। ঋষি তার এক্স গার্লফ্রেন্ডের কথা, তার দুঃখের কথা সবকিছুই নীতুকে খুলে বলেছেন। নীতু তাকে অবসাদ থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিতেন। নানাভাবে নিজেকে ব্যস্ত রাখার উপায় বাতলাতেন। অজান্তেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন তারা।

কয়েক দিন পর শুটিং করতে প্যারিসে যান ঋষি। অন্য একটি শুটিংয়ের জন্য নীতু তখন কাশ্মীরে। আউটডোরে হঠাৎ যেন কিছু ভালো কিছু ভালো লাগে না ঋষির। মনের মধ্যে কেমন যেন উৎকন্ঠা হতে থাকে থাকে। সবকিছু ঠিক আছে, কিন্তু কী যে ভুল হচ্ছে, সেটা কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না ঋষি। এমন সময় মনের ভেতর থেকে কেউ যেন তাকে বলে ওঠে, তার নীতুর কথা মনে পড়ছে। নীতুর সঙ্গে কথা বললেই, সব ঠিক হয়ে যাবে। তখনকার দিনে মোবাইল, হোয়াটসঅ্যাপ এর চল ছিল না না ছিল না। টেলিগ্রাম করলেন ঋষি। লিখলেন, তোমার কথা খুব মনে পড়ছে। টেলিগ্রাম পেয়ে ঋষির মনের কথা স্পষ্ট বুঝতে পারলেন নীতু। তারপর থেকেই তাদের সম্পর্কের শুরু। একে অপরকে কখনও প্রপোজ করেননি তারা।

প্রেম যেমন মধুর ছিল, ঝগড়াও হতো মার কাটারি। মাসের পর মাস প্রায় কথা বন্ধ থাকতো নীতু, ঋষির। ঝুটা কাহি কা-র শুটিং চলাকালীন ঝগড়া বেঁধে গিয়েছিল তাদের। জীভান কে হার মোড় পর গানটার শুটিং কারার সময় একে অপরের সঙ্গে নাকি একটাও কথা বলেননি তারা। তবে গানে তাদের কেমিস্ট্রি দেখে তা বোঝার উপায় নেই।
প্রথমে ঋষি-নীতুর সম্পর্ক নিয়ে বেশ আপত্তি উঠেছিল নীতুর বাবা-মায়ের। কিন্তু দৃঢ় পরিকর ঋষি। নীতুকেই বিয়ে করবেন, এই কথা ঠিক করে ফেলেছিলেন তিনি। গায়ে ধুম জ্বর নিয়ে একদিন সোজা চলে যান নীতুর বাড়ি, তার বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। নীতুর অভিভাবকরা বুঝতে পারেন, এই ছেলে সত্যি তাদের মেয়েকে ভালোবাসেন। এই সম্পর্ক মেনে নেন তারা। তবে বিয়ের আগে ঋষির সঙ্গে একা দেখা করতে যাওয়ার অনুমতি ছিল না নীতুর। ভাইকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হতো তাকে। দু’বাড়ির সম্মতিতেই ১৯৮১ সালে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন এই দম্পতি। তবে কাপুর পরিবারের একটি রীতি আছে। কাপুর খানদানের কোনও পুত্রবধূ বিয়ের পর কখনো রং মেখে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ায় না। নীতু মেনে নিয়েছিলেন সেই শর্ত। বার বার নীতু বলেছেন, এই নিয়ে কোনও আফসোস নেই তার। ছোটবেলা থেকে অভিনয় করেছেন।

১৫ বছর টানা কাজ করেছেন। তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন। ঋষির সঙ্গে সংসার করাটাই তার জন্য ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের আগে নীতু-ঋষি একে অপরকে আদর করে বাবা বলে ডাকতেন। বিয়ের পর শ্বশুর-শাশুড়ির সামনে তা সম্ভব নয়। তাই বাবা না ডেকে বব বলে ঋষিকে সম্বোধন করতেন নীতু। বব এর মতো একটা বিদেশি নাম পেয়ে বেশ খুশি হন ঋষি। বিয়ের এত বছর পর তাদের প্রেম জাহেরিলা ইনসান-এর শুটিংয়ের দিনগুলোর মতো আনকোরা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ঋষির হাত শক্ত করে ধরে নীতু বলেছেন, এক মে আউর এক তু, ইসতারহা মিলবো বারবার।