চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট আম বাজার ২ জুন উদ্বোধন


ফয়সাল আজম অপু, বিশেষ প্রতিনিধিঃ আগামী ২ জুন বাংলাদেশের বৃহৎ আমবাজার কানসাট আমবাজার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে জমে উঠবে আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাজারগুলো। বাগানে আম পাড়া আর তা বাজারজাতকরণে বাজারগুলো শুরু হবে আম ব্যবসায়ীদের সরব উপস্থিতি। 

২ জুন কানসাট আমবাজারে আম বাজারজাত উদ্বোধন করবেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ সামিল উদ্দীন আহমেদ শিমুল। আম বাজারজাত ও পরিবহনে জেলাজুড়ে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে । তবে করোনা পরিস্থিতিতে বাজারজাতকরণে প্রতিকুল প্রভাব পড়তে পারে সন্দেহে আম ব্যবসায়ীরা দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। 

আম বাজারজাতকরণে বাধার সম্মুখীন হলে বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে জেলার আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। তবে আম বাজারজাতকরণে ব্যবসায়ীরা যাতে কোন সমস্যার সম্মুখীন না হয় সেবিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, এবছর জেলায় প্রায় ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর আমবাগানে আম ধরেছে। প্রায় ২৫ লক্ষ ৩৯ হাজার ৬৩০ টি আমগাছে এবার আমচাষ হচ্ছে। জেলায় বর্তমানে গোপালভোগ ক্ষিরসাপাত (হিমসাগর) সহ বিভিন্ন গুটিজাতের আম পরিপক্কতা পেতে শুরু করেছে। 

সুত্র জানায়, আগামী জুনের ১ম সপ্তাহের পর গোপালভোগ ও ক্ষিরসাপাত (হিমসাগর) আম পরিপূর্ণ পক্কতা পেলে আমপাড়া শুরু করবে আমচাষীরা। ইতিমধ্যে দেশের সর্ববৃহৎ আমবাজার কানসাট আমবাজার, জেলা সদরের সদরঘাট ও তহাবাজার, গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর বাজার ও ভোলাহাটের আম ফাউন্ডেশন সহ উপজেলার আমবাজারগুলো যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানা যায়। জেলার প্রায় অধিকাংশ মানুষ আমকে ঘিরেই তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এবার নানা প্রতিকুলতার মাঝে ঘুর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে আমচাষীদের মুখের হাসি মলিন হয়ে গেছে। 

তরুন উদ্যোক্তা ও আম ব্যবসায়ী শহিদুল হক হায়দারি (শহিদ মিয়া) জানান, ঘুর্ণিঝড় আম্পান আমবাগানের অনেক ক্ষতি করলেও আমাদের জন্য শাপেবর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ আম্পানের প্রভাবে সাতক্ষীরাসহ দেশের অন্যান্য জেলার আমবাগানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ফলে এবার আমের ভাল দাম পাবার আশা করছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আমের ক্রেতা না পেলে আমচাষীদের লোকসান গুনতে হতে পারে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আমবাজার কানসাট আমবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ওমর ফারুক টিপু জানান, এরই মধ্যে আমবাজারের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। 

কানসাট-আব্বাসবাজারের বিশিষ্ট আম ব্যবসায়ী রবিউল আলম জানান, গত কয়েক বছরে আমের তেমন ব্যবসা না হওয়ায় ক্ষতির মধ্যে আছি। আম চালানে যদি এবছর করোনার প্রভাব পড়ে তবে কোটি টাকার বাগান নিয়ে পথে বসতে হবে। উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনাও করেন তিনি। 

 আগামী ২ জুন সংসদ সদস্য ডাঃ সামিল উদ্দীন আহমেদ শিমুল কানসাট আমবাজারের আম বিক্রয়ের উদ্বোধন করবেন। তিনি জানান, গত বছর কানসাট বাজার হতে প্রায় ৯’শ কোটি টাকার আম বিক্রয় হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় আম্পানের কারণে বাগানের প্রায় ২০% আম পড়ে যাবার কারণে এবং করোনার প্রভাবে এবার বিক্রি কম হতে পারে। 

তিনি বলেন, আম বাজারজাতকরণে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তা যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখবে। অন্যথায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন আমচাষী ও আমব্যবসায়ীরা। এছাড়া পরিবহন আর বাজারজাত সঠিকভাবে করতে না পারলে অনেক ব্যবসায়ী পুঁজি হারানোর ভয়ে আছেন বলে জানান তিনি। 

এবিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) একেএম তাজকির-উজ-জামান বলেন, জেলার আমকে ব্রান্ডিং করার জন্য জেলা প্রশাসন কাজ করছে। এরই মধ্যে সচিবালয়ে জেলার আমের বাজার তৈরী করার কাজ চলছে। 

তিনি জানান, বিভিন্ন জেলার আম ব্যবসায়ীরা জেলার আমবাজারে এসে যাতে নির্বিঘ্নে আম ক্রয় করতে পারে, সেব্যাপারে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। আম বাজারজাত ও পরিবহণে যাতে কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয় সেবিষয়েও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।