তানোরে ধান সিন্ডিকেটে দীশাহীন কৃষক


তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে চাতাল মালিক ও আড়তদারদের সিন্ডিকেটে ঘন্টায় ঘন্টায় কমছে ধানের দাম বলে অভিযোগ কৃষকদের। এতে করে চরম দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। এদিকে কৃষি বিপনন বিভাগ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে ঘুম পাড়ছেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে ।
দেশের প্রতিটি পণ্যের দাম লাগামহীন হলেও ধানের দামে এমন সিন্ডিকেটের রহস্য খুজে পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তা বাবুরা বলে দাবি তাদের। কিন্তু এমন আজব কথা মানতে নারাজ কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা। ফলে আগামী রোপা আমন চাষ নিয়ে চরম শংকিত উপজেলার কৃষকরা।
বুধবার তালন্দ হাটে প্রচুর পরিমানে  ধান কিনা বেচা হয়। হাটেই কথা হয় ধান বিক্রেতা বারোঘরিয়া গ্রামের সারোয়ারের সাথে তিনি জানান ১০ মন জিরা জাতের ধান নিয়ে এসেছিলাম, বিক্রিও করেছি। একমন ধান বিক্রি হয়েছে ১২৫০ টাকায়। অথচ গত রবিবার ওই হাটেই  ১২৯০ থেকে ১৩০০ টাকা ধরে বিক্রি করেছিলাম। কিন্ত দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি মনে ৫০ টাকা কম। আমি দুপুরের দিকে ১২৫০ টাকা মনে বিক্রি করতে পেরেছি।
বিক্রির এক ঘন্টার মধ্যে কমে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই গ্রামের মনি নামের আরেক কৃষক ছিয়াত্তর জাতের ২ মন ধান নিয়ে এসেছেন হাটে বিক্রির জন্য। তিনি জানান ১ মন ধান ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে না। অথচ গত রবিবার ১০৪০ থেকে ১০৫০ টাকা ধরে বিক্রি করেছি। কিন্তু আজ বিক্রি করতে হয়েছে ১০০০ হাজার টাকায়। আমি বিক্রির আধা ঘন্টা পর  মনে ৫০ টাকা কম।
আরেক কৃষক জিরা জাতের ধান নিয়ে এআড়ত ওআড়তে বিক্রির জন্য ঘুরাঘুরি করছেন। তিনি জানান দুপুরের দিকে জিরা ধান ১২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এক ঘন্টা পর ৫০ টাকা কমে ১২০০ টাকা দাম বলছে। কি কারনে কম জানতে চাইলে অনেকেই জানান, আড়তদার ও মিল মালিকদের সিন্ডিকেটের কারনেই ধানের দাম প্রতি ঘন্টায় কমেছে। এদামে বিক্রি হলে খরচের টাকা উঠবেনা। প্রচুর লোকসান গুনতে হবে।
কৃষক আশরাফুল, মাসুদ, কাজলসহ অনেকে জানান, ধানের দাম আধা ঘন্টা পরপর কমে যাওয়ার কারনে কৃষকরা বিক্রি না করে শতশত মন ধান ফেরত নিয়ে গেছেন।
এক চাতাল মিল মালিক জানান, মিলারেরা মিটিং করে ধান কিনা যাবে না, কারন নির্বাচনী বছর কখন কি হয় একারনে তারা না কিনে ক্ষুদ্র ধান ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট করে কেনার সুযোগ করে দিয়েছেন। যার কারনে ধানের দাম কমিয়ে কৃষককে পথে বসাতে এমন পরিকল্পনা করেছেন। এজন্য এঅবস্থা। তিনি আরো জানান, এভাবে ধানের দাম থাকলে রোপা আমন চাষ করতে পারবে না কৃষকরা। কারন সার কীটনাশকের প্রচুর দাম।
কৃষকরা জানান, কোন জিনিসের দাম কম নাই। সবকিছুর দাম বাড়তি। অথচ সিন্ডিকেটে ধানের দাম কমে যাচ্ছে। যাদের জমি কম ধানের উপর নির্ভরশীল, ধান বিক্রি না হলে যাদের বাজার ঘাট হয়না তাদেরই মুল সমস্যাদি। যারা ধনাঢ্য তাদের তো কোন সমস্যাদি নেই। যাকে বলে প্রান্তিক কৃষকদের মরন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, দামের ব্যাপারে বিপনন কেন্দ্র সব বলতে পারবে।
কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের বিভাগীয় সহকারী পরিচালক শাহনাজ পারভিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের জনবল কম, জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসব দেখবেন।
বিপনন কেন্দ্রের জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা  মনোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এমন হওয়ার কথা না। কেউ সিন্ডিকেট করে দাম কমালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতি ঘন্টায় কমছে এটা নাকি চাতাল মালিকদের কারসাজি জানতে চাইলে তিনি বলেন দু এক দিনের মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহ অভিযান পরিচালনা করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।