ফুলবাড়ীতে কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষকেরা চোখে অন্ধকার দেখছেন


ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি :  চার মাস ধরে রোজগার নেই মোকাররম হোসেনের। করোনার কারণে বিদ্যালয় বন্ধের পর তিনি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ধারদেনা করে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার পরিবারের। সরকারি কোন সাহায্য-সহযোগিতাও পাননি। মোকাররম হোসেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর মডার্ণ কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষক।  

মোকাররম হোসেনের বাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের পুরাতন বন্দর গ্রামে। কোনো জমিজমা নেই। পিতার মৃত্যুর পর মাকে নিয়ে তার সংসার। ৩ বছর ধরে শিক্ষকতা আর প্রাইভেট পড়ানোর টাকায় সংসার চলে। করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় মোকাররম হোসেনের মতো উপজেলার ৩৯টি বিদ্যালয়ের ৫০৭ জন শিক্ষক ও কর্মচারী পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

বাবা মানু চন্দ্র মহন্তের মৃত্যুর পর চার বছর ধরে ফুলবাড়ী ক্যাডেট একাডেমিতে শিক্ষকতা আর প্রাইভেট পড়িয়ে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন পৌর শহরের পশ্চিম গৌরীপাড়া গ্রামের স্মৃতি রানী মহন্ত। তিনি বলেন, ‘প্রাইভেট আর শিক্ষকতার বেতন দিয়ে ভালোই চলছিল। করোনা এসে সব ওলটপালট করে দিল। পারছি না ক্ষুধার জ্বালা সইতে, না পারছি কষ্টের কথা কাউকে কইতে।’

সোনা মনি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষিকা টুম্পা রানী বর্মন বলেন, ‘৭০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ভালোই চলছিল স্কুলটি। স্কুল বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বেতন দিচ্ছে না, তাই আমরাও বেতন পাচ্ছি না। এতে কষ্টের মধ্যে পড়ে গেছি।’

মডার্ণ কিন্ডার গার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বেতন দিচ্ছেন না। ফলে শিক্ষাকদেরও বেতন দিতে পারছি না। প্রাইভেট বন্ধ থাকায়ও দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষকেরা। মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।

ফুলবাড়ী কিন্ডার গার্টেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. আনিছুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোকাররম হোসেন বিদ্যুৎ বলেন, চার মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা না পেয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। কিছুদিন ধারদেনা করে চাললেও এখন সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। সহযোগিতা চেয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাছে তারা আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনো কোনো সহযোগিতা জোটেনি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাম্মৎ হাসিনা ভুঁইয়া বলেন, উপজেলায় ব্যক্তি ও বিভিন্ন সংস্থা পরিচালিত ৫৯ টি বিদ্যালয় রয়েছে। এ পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সরকারি কোন প্রণোদনা বরাদ্দ আসেনি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক-কর্মচারীরা সমস্যায় পড়েছেন। তাদের সহযোগিতা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।