স্যার কাহন!


স্যার (Sir) ইংরেজী শব্দ বাংলা অর্থ হলো ‘জনাব’। সাধারণত অপরিচিত কাউকে সম্মোধন করতে স্যার বা মিস্টার শব্দটার ব্যবহার শুরু হলেও পরবর্তীতে তা শিক্ষক ‍বা উর্ধতন বা অপরিচিতদের ভদ্রভাবে সম্বোধন তথা সম্মান স্বরুপ স্যার বলা হয় । এ ছাড়াও ব্রিটিশ সরকার ১৩৪৮ সাল থেকে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য নাইট উপাধি ঘোষণা করে উল্লেখ্য যে,নাইট উপাধী প্রাপ্ত ব্যাক্তিগন তাঁর নামের আগে স্যার শব্দটি বসাতে পারবেন। তবে এর জন্য আপনাকে ব্রিটিশ নাগরিক হতে হবে। সমস্য হলো, আপনি যদি অন্য কোন দেশের নাগরিক হন এবং নাইট উপাধিতে ভূষিত হন তবে আপনি স্যার শব্দটি নামের আগে ব্যবহার করতে তথা লিখতে পারবেন না।
এখন আসি রাষ্ট্র প্রসঙ্গে, আমাদের দেশের সাংবিধানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” যদিও গণ অর্থ নাগরিক এবং প্রজা অর্থও নাগরিক সুতরাং কেন নাগরিকের প্রতিশব্দ দুইবার ব্যবহার করা হয়েছে সে আলোচনা আজ নয়। কিন্তু এতটুকু বোঝা যায় জনগণই সকল কিছুর মালিক। এবং আমাদের সংবিধানের প্রথম ভাগে ৭-এর (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে।’
রাস্ট্র্রের সাথে জনগণের সম্পর্ক শুধুমাএ “সেবা” । এইসেবা নিশ্চিত হবে সরকারী কর্মচারীর দ্বারা ।
বাংলাদেশের সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদে সরকারী কর্মচারী (Public Servant) শব্দটির উল্লেখ আছে। সংবিধানে উল্লিখিত এই Public Servant বা সরকারী কর্মচারীর পরিস্কার ধারনা পাওয়া যায় পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ১৪ ও ২১ ধারায়-
১৪ ধারাঃ “Servant of the State” The words [Servant of the Republic] denote all officers or servant, continued, appointed or employed in Bangladesh by or under the authority of the Government.
২১ ধারাঃ Public servants
The Chairman, members, officers and other employees of the Council shall be deemed to be public servants within the meaning of section 21 of the Penal Code (XLV of 1860).
মোদ্দাকথা রাস্ট্র প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মাধ্যমে নাগরিকদের তথা রাস্ট্রের মালিকদের জন্য গুনগত সেবা নিশ্চিত করবে।
এখন প্রশ্ন হলো, মালিক কি তাঁর কর্মচারীদের স্যার বলবে না কি কর্মচারী তার মালিককে স্যার সম্মোধন করবে ? নাকি উভয় উভয়কে স্যার সম্মধোন করবে?
আমাদের দেশে বর্তমানে সরকারী সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মালিকরাই কর্মচারীদের স্যার বলে অভস্ত্য । সমস্যা নেই, হতে পারে এটা আমাদের সংস্কৃতির স্রোত সমস্যা হলো কর্মচারী যখন মনে করে স্যার সম্মোধনটা তার অধিকার হিসেবে স্বীকৃত তখন। শুধু তাই নয় স্যার শুধু সম্মোধনই নয় বরং তারা এটা থেকে নিজেদেরকে মালিকের চাইতে উদ্ধের ব্যাক্তি ভাবতে শুরু করে । তখন সেবার মানের গুনগতদিকটা ঠিক থাকে না । এবং প্রকৃত অর্থেই এরা যে জনসেবক তা বেমালুম ভুলে গিয়ে জনপ্রভুরূপে নিজেদের জাহিরের প্রয়াসে লিপ্ত। এতে দেশের সচেতন জনমানুষ হতবাক ও বিস্মিত।
সুতরাং জনগণের প্রকৃত অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে সত্যিকারে গণতান্ত্রিক রাস্ট্র নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

লেখকঃ মিলন চৌধুরী, সমাজ উন্নয়ন কর্মী।