নাচোল খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মালিকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা


অলিউল হক ডলারঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল খাদ্য অধিদপ্তরের ৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ১জন মিল মালিকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে মিলারের কাছ থেকে গম কেনার অভিযোগে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বুধবার (১০ জুন) সন্ধ্যায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

এতে সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আসামিদের মধ্যে ছয়জনই খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী। অন্যজন মিল মালিক। আসামিরা হলেন- নাচোল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আজহারুল ইসলাম (৫৬), ওসি এলএসডি মো. মনিরুজ্জামান (৩৮), নাচোলের ইসলামপুর এলাকার মেসার্স মিলন অটো রাইস মিলের মালিক শওকত আকবর মিলন (৫০), নাচোল খাদ্য গুদামের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ রানা (৩৪), নিরাপত্তা প্রহরী নারদ চন্দ্র পাল (৩৭), আবু সাঈদ (৪৬) এবং ইসারুল ইসলাম (৩৬)।

মামলার বাদী দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে কৃষকদের কাছ থেকে গম সংগ্রহ অভিযান চলছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গম শুধুমাত্র প্রান্তিক চাষিরাই দেবেন। কিন্তু গেল ৩ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে একটি ট্রাকে করে ২৫ মেট্রিক টন গম গুদামে ঢোকান মিল মালিক মিলন। বিষয়টি চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক জানতে পারেন।

তিনি নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) গুদামে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন। পরে তারা অভিযান চালিয়ে গুদামের ভেতর ট্রাকে থাকা ৫০০ বস্তা গম জব্দ করেন। এই গমের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কোনো জবাব দিতে পারেননি। এর পর রাতেই ইউএনও এবং ওসি ইসলামপুরে মিলনের রাইস মিলে অভিযান চালান।

সেখানে ‘খাদ্য অধিদপ্তরের জন্য’ লেখা ৫০ কেজি ওজনের ২৩১টি চটের বস্তা ভর্তি চাল, ‘খাদ্য অধিদপ্তরের জন্য’ লেখা ৫০ কেজি ওজনের নতুন ৬২৫টি ও ‘খাদ্য অধিদপ্তরের জন্য’ লেখা পুরাতন ৬০০টি খালি চটের বস্তা, ‘গম সংগ্রহ-২০২০, নাচোল এলএসডি চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ এবং ‘বোরো সিদ্ধ চাল-২০২০, নাচোল এলএসডি চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ লেখা দুটি স্টেনসিল পাওয়া যায়। সেগুলো জব্দ করা হয়। মামলার বাদী জানান, এসব আলামত পেয়ে তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে কৃষককে ফাঁকি দিয়ে নিয়মবহির্ভুতভাবে ধান ও গম সরবারহ করে আসছিলেন মিল মালিক মিলন। খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসেই এই দুর্নীতি হয়ে আসছিল।

মিলার মিলন ধান ও গম সরবরাহ করে আসলেও ভুয়া কৃষকের তালিকা লেখা হতো খাদ্যগুদামে। এভাবে দুর্নীতি আড়াল করা হতো। বিষয়টি ধরা পড়ার পর গত ৬ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক অন্তরা মল্লিক নাচোল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

দুদক কর্মকর্তা মো. আল-আমিন জানান, অপরাধটি দুদকের আইনে পড়ার কারণে বুধবার নাচোল থানা পুলিশ জিডিটি দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়। এর পর জিডির প্রেক্ষিতে দুদক কার্যালয়ে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। দ্রুতই এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে। তাদের গ্রেপ্তারে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।